সিইসির আমন্ত্রণে ইসিতে টিআইবি

নির্বাচন ব্যবস্থা আমূল সংস্কারের প্রস্তাব রাখবে কমিশন— সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি— বণিক বার্তা।

দেশে প্রকট রাজনৈতিক বৈরিতা বিরাজমান। এ বৈরিতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া কমিশনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। আমরা বিদায়ের আগে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রাখব। জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৫ ধাপে করা হলে এটি অনেক বেশি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। এসব বিষয়ে টিআইবির সঙ্গে আমরা পরামর্শ করেছি। তারাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাথে একমত হয়েছেন। এসব কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আজ রোববার (২ জুন) নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য আসে। সকাল সাড়ে ১১টায় এ আলোচনা শুরু হয়। এতে নির্বাচন ব্যবস্থা, ইভিএম পদ্ধতি এবং নির্বাচনী কিছু আইনের সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়। অন্তত দুই ঘণ্টার ওই আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের আলাদা ব্রিফ করেন সিইসি ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

টিআইবির সঙ্গে বৈঠকের কারণ জানতে চাইলে সিইসি বলেন, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও তার কয়েকজন সহকর্মী এসেছিলেন। আমরা পুরো কমিশন তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরাই মূলত তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তার কারণটা হচ্ছে, প্রায়ই আমাদের মধ্যে এসএমএস (শর্ট ম্যাসেজ) এর মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছিল। তাই আমরা আরো বড় পরিসরে আলোচনা করতেই আজ বসেছিলাম।

বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, টিআইবির মূল দাবিটা ছিল আমরা যেন দ্রুত তথ্য দেই। উনারা (টিআইবি) তথ্যের অবাধ প্রবাহ চাচ্ছেন। যেকোনো তথ্য যেন আমরা ওয়েবসাইটে সঙ্গে সঙ্গে তুলে দেই সে কথা তারা বলেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উনারা বলেছেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছি না। এছাড়া, টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। এবারের নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে ফেয়ার হয়েছে। ইভিএম প্রযুক্তি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এটি নিয়ে অনাস্থা ছিল, এখনও আছে। তবে ইভিএমে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি, এখানকার ভোট ওখানে চলে গেছে। ইভিএমকে আরো সহজ করা যেতে পারে।

সিইসি বলেন, আমরা টিআইবিকে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন ধাপে ধাপে করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে। কারণ ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে নির্বাচনকে আরো বেশি সুষ্ঠু করা যাবে। তখন আরো বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা যাবে। আরো বেশি পোলিং এজেন্ট মোতায়েন করা সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কখনও নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করা সম্ভব নয়। এটি করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা যেহেতু গবেষণামূলক এবং বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য করি, সেজন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের মন্তব্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা নিজেদের উৎকর্ষ বিকাশের সুযোগ পান বলে তারা আমাদের বলেছেন। সেটির জন্য আমরা গর্বিত। একই সঙ্গে তারাও আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। নির্বাচন কেন্দ্রিক জাতির যে প্রত্যাশা সেই জায়গায় টিআইবি এবং ইসি নিজেদের একই পথের যাত্রী বলে মনে করেছি। তারা এবং আমরা দুই পক্ষই চাই যেন সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, জনগণের প্রত্যাশার নির্বাচন হয়। আমাদের কাজের পদ্ধতির পার্থক্য আছে, ক্ষমতা ও এখতিয়ারের পার্থক্য আছে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। আমরা আশা করি এমন আলোচনা অব্যহত থাকবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে যে নির্বাচন ব্যবস্থা আছে সেটি বর্তমানে ঢেলে সাজানো দরকার। এটি আমরা আগেই নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করেছি। হয়তো বা সেটি কোনো কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চোখ এড়িয়ে গেছে সেই সময়। তবে তারা আমাদের সঙ্গে নিজে থেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেটি সম্পর্কে তারাও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তারা আমাদের বলেছেন এটি সম্পর্কে আরও চাহিদা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। দ্বিতীয় যে বিষয়টি, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে কিন্তু সেটি হয়েছে নিজেদের মধ্যে। এ বিষয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।

কয়েক ধাপে ভোটগ্রহণ ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেশিনের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একদিনে আমাদের সারা দেশে নির্বাচন হয়। বিশাল একটি কর্মযোগ্য। এটিকে ভেবে দেখা দরকার। এটি না করে পর্যায় ক্রমে করা যায় কিনা? সিইসি বলেছেন যদি ৫ দফায় হয় তাহলে সুবিধা হবে নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া ইভিএম যদি হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি একমত থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব হবে। তবে ইভিএম নিয়ে আমরা বরাবরের মতো আজও বলেছি এটি একমাত্র সমাধান নয়। এখানে যে জিনিসটা ঘাটতি আছে সেটি হচ্ছে পেপার ট্রেইল নাই ইভিএমএ। এটি যুক্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গ একমত হয়েছেন। বলেছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয় তাহলে এটি করা যেতে পারে। তারা বলেছেন, এটি করা খুব সহজ।



নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি: বণিক বার্তা।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানান, ২০০৮ এর নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে আমরা ফেরত যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সংবিধানে সেটির অনুমতি দিচ্ছে না। এরকম একটা যুক্তি আছে। কিন্তু যে বিষয়টি করা সম্ভব সেটি বিভিন্ন দেশে আছে সেটি হচ্ছে নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকে তার নিরপেক্ষতা এবং স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ ও বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা। এটি বিভিন্ন দেশে আছে, সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে। আর যদি একেবারে নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় তাহলে সেটিকে দেশবাসী স্বাগত জানাবে, আমরাও স্বাগত জানাব। নির্বাচনকালে যে প্রক্রিয়ার সরকারই থাকুক না কেন, যেন সেটি সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করে তার ওপর জোর দেয়া উচিত।

ড. ইফতেখারুজ্জামন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছে থাকতে হবে। আমি সবগুলো রাজনৈতিক দলের কথা বলছি। তারা যদি মনে করে আমি ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন করব বা ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই নির্বাচন করবো, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলামসহ ৫ জন। অপরদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ইসির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. আহসান হাবিব খান, নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন