বিআইডিএসের তথ্য

নারীর অবৈতনিক কাজের মূল্য ৫ হাজার ৩০৭ বিলিয়ন টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের নারীরা গৃহস্থালিতে অবৈতনিক যে কাজ করেন, টাকায় তার মূল্য ৫ হাজার ৩০৭ বিলিয়ন টাকা। ২০২১ সালের হিসাবে এ টাকা জিডিপির ১৪ দশমিক ৮ শতাংশের সমপরিমাণ। বিপরীতে পুরুষের অবৈতনিক কাজের অবদান জিডিপির ২ দশমিক ৮ শতাংশ সমপরিমাণের। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত গৃহস্থালিতে নারীদের অবৈতনিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্য জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

গতকাল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘রিকগনিশন অব আনপেইড কেয়ার ওয়ার্ক: আ স্টেপ টুওয়ার্ডস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ড. কাজী ইকবাল জানান, শহর ও গ্রামের আট হাজার পরিবারের ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ১৭ হাজার ৭৭২ জনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে তারা নারীর অবৈতনিক আর্থিক মূল্যের এ তথ্য পেয়েছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৪ জন মহিলা ও ৭ হাজার ৭৪৮ জন পুরুষ ছিলেন।

সেমিনারে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘যেসব নারী ঘরে কাজ করে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, সেসব নারীর অবদানের মূল্যায়ন আমাদের জিডিপিতে প্রকাশ করা জরুরি। জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।’

সন্তান লালন-পালন নিশ্চিতভাবে ‘বাজার কার্যক্রম’ নয়। পুঁজিবাদী বিশ্ব তার ‘‌বাইপ্রডাক্ট’ হিসেবে সব কিছুকে বাজার অর্থনীতিতে নিয়ে আসছে। এ কারণে অবৈতনিক কাজকে কেবল কেয়ার ইকোনমির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক উদ্বেগের পাশাপাশি পারিবারিক দায়িত্ববোধ ও বণ্টনের বিষয়ও আমাদের তুলে ধরতে হবে। তবে পারিবারিক রীতির রূপান্তরও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো বিষয় হতে পারে। আমরা যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করছি তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আমাদের রীতিনীতি এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি একটি বড় বাধা। এসবের জন্য আমাদের বাড়তি কিছু নীতিমালা তৈরি ও বাজেটে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা উদ্ধৃতি দিয়ে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘নারীর বৈতনিক কাজের চেয়ে অবৈতনিক কাজের মূল্য তিন গুণ বেশি। এখন সময় এসেছে স্যাটেলাইট সিস্টেম অব অ্যাকাউন্টসের মাধ্যমে নারীর অবৈতনিক কাজগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার। এর আর্থিক মূল্য জাতীয় বাজেটের কত অংশ তাও দেখা জরুরি।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের পরিচালক (কর্মসূচি) বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা সমাজের কিছু রীতিনীতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। জাতীয়ভাবে নারীর গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজ স্বীকৃতি পেলে তা এ পরিবর্তনকে আরো বেগবান করবে। আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুভাবেই নারীর গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি চাই। এক্ষেত্রে সরকারের বড় ভূমিকা রয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘সঠিক বরাদ্দ দিয়ে উদ্যোগ নিলে লিঙ্গভিত্তিক রীতিরও পরিবর্তন করা যায়। তবে এটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।’ ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, ‘স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি সম্মিলিত পদ্ধতিতে হতে হবে। অংশীদারত্ব ও সমন্বয়ই এখানে মূল বিষয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন