ক্ষমতাবানদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা (ফাইল ছবি)

ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার (২৬ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এ আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড, সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা এবং অবসরে যাওয়া র‌্যাব ও পুলিশ প্রধানের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ করার জন্য আদালতের নির্দেশনা দিয়েছে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার যথার্থতা প্রমাণের বাধ্যবাধকতা অভূতপূর্ব গুরুত্ব লাভ করেছে বলে মন্তব্য টিআইবির।

সাবেক সেনাপ্রধান এবং র‌্যাব ও পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ও ক্ষমতাসীন দল শুধু বিব্রতবোধ থেকে বিভিন্নভাবে দায়সারাভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, তেমনই সরকারের জন্যেও আত্মঘাতী হবে। ব্যাপক আলোচিত তিনটি ঘটনাই কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বরং উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বহিঃপ্রকাশ, যা হিমশৈলের চূড়ামাত্র।

তিনি বলেন, একইভাবে এটি সহজেই বোধগম্য যে, এ ধরনের অপরাধের দায় শুধু প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অতএব, সরাসরি দায়ী ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে সহায়ক, যোগসাজশকারী, অংশীদারত্বের ফলে লাভবান এবং বিশেষ করে সুরক্ষাকারী মহলকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব না হলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার আরও এক দফা ফাঁকাবুলি হিসেবেই রয়ে যাবে। এ ধরনের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন ব্যাপকতর ও গভীরতর হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বিবৃতিতে আরও বলেন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সাবেক প্রধানসহ একজন আইন প্রণেতার এহেন দায়বদ্ধহীন কর্মকাণ্ড জনমনে সরকার, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসনকাঠামো নিয়ে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে, যার বিশ্বাসযোগ্য নিরসন জরুরি। একইসঙ্গে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচিত কোনও কোনও বিষয়ে যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, তা যেন লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘোষণা ও প্রত্যয়ের বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায়— দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঘোষিত দলটির নির্বাচনি ইশতেহারে। এবারের ইশতেহারে জবাবদিহিমূলক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে রয়েছে ছয় অনুচ্ছেদ সম্বলিত পুরো এক অধ্যায়ব্যাপী প্রতিশ্রুতিমালা। একইসঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রয়েছে এক ডজনেরও বেশি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। যদিও কীভাবে এসব আড়ম্বরপূর্ণ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তার কোনও কৌশল বা পথরেখা নির্ধারিত নেই। এমন বাস্তবতায় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল যদি তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার বিন্দুমাত্র প্রমাণ দিতে চায়, তবে তিনটি ক্ষেত্রেই মৌলিক উপাদান যে ক্ষমতার অপব্যবহার, তার বিদ্যমান স্বরূপ উদ্ঘাটনসহ সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠান ও খাতভিত্তিক উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা অপরিহার্য। একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পথরেখা নির্ধারণের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন