ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ছয় জেলাকে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার (২৫ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ক
জরুরি সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। ছয়টি জেলা হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা,
পটুয়াখালী ও ভোলা। পূর্বাভাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ নিরূপণ করে এ জেলাগুলোকে
প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো.
মহিববুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সাড়া
বিশ্বের রোল মডেল। গত ১৫ বছরে ঘূর্ণিঝড়সহ সকল দুর্যোগে তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায়
আমরা যথাসময়ে প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের দুর্দশা লাঘব এবং জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমাতে
সক্ষম হয়েছি। এ ঘূর্ণিঝড়টিও যাতে একই ধারাবাহিকতায় সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারি তার
জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
চলমান ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত
এক সপ্তাহ ধরে এ ঝড়টির বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে
পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে পূর্বাভাস দিচ্ছে এবং আগাম কার্যাবলী (অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন)
ও সাড়া প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা
ভারতে অবস্থিত আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এর
পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করছি।
তিনি বলেন, এ ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম প্রেরণ শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়
প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গত কয়েকদিন যাবত মাঠে আগাম সতর্কবার্তা
প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অ্যান্টিসিপেটরি
অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও সাইক্লোন
আর্লি অ্যাকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আগাম কার্যক্রম শুরু করেছে এবং
মন্ত্রণালয়কে টেকনিক্যাল উপদেশ দিচ্ছে।
মো. মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্বন্ধে সরেজমিনে
অবহিত হতে আমি গতকাল শুক্রবার (২৪ মে) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর পরিদর্শন করেছি। আবহাওয়া
অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাব্য গতিপথ, প্রভাব, ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা
ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফিং প্রদান করছে। এরপর মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্বন্ধে
জানতে সিপিপি প্রধান কার্যালয় ও অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করেছি এবং ওয়্যারলেসের মাধ্যমে
সরাসরি ১৭৪টি মাঠ কার্যালয়কে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
সভায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো হলো আগাম সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি
প্রচার ও জনগণকে সচেতন করা, আগাম মানবিক কার্যাবলী গ্রহণ করা, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে
সমন্বয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সভা অনুষ্ঠান, সব পর্যায়ে
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা, আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, শিশু
খাদ্য এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা, জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ,
বেড়ি বাঁধ, ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি রোধে আগাম ব্যবস্থা, বিভিন্ন
প্রচার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া এবং দুর্যোগের তথ্য পাওয়ার জন্য টোল
ফ্রি ১০৯০ ব্যবহার।
ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ
ইত্যাদিসহ অন্যান্য জরুরি সেবা অব্যাহত রাখা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত
হয়।