বিআইডিএসের সেমিনারে বক্তারা

চ্যালেঞ্জের মুখে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। তার বিপরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা। আবার কৃষিকাজে তরুণদের আগ্রহ না থাকায় কমছে কৃষকের সংখ্যা। তবে বাণিজ্যিক ফার্মিং বাড়লেও ধানচাষে আগ্রহ নেই তাদের। তরুণ উদ্যোক্তারাও আসছে না ধানের চাষাবাদে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। অর্থকরী ফসল উৎপাদন করে রফতানি আয় বৃদ্ধি নাকি ধান চাষ করা হবে- এমন প্রশ্নও সামনে আসছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, ভূ-রাজনীতি ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তাই  আসছে বাজেটে কৃষি খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কার্যালয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে আগামীতে কৃষি খাতের চিত্র কেমন হবে-তা নিয়ে আলোচনা করেন কৃষিবিদরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল ও যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জিওফ উড।


মূল আলোচনায় ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি এবং কৃষক কমছে। এতে ধান উৎপাদন দ্বিগুণ করা নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যদিও উন্নত প্রযুক্তি এসেছে, নতুন নতুন জাতও আসছে। আর তরুণ উদ্যোক্তরাও মাছ বা অন্য ফসল চাষ করছে। বাণিজ্যিক কৃষি শুরু হলেও তারা রফতানির কথা মাথায় রেখে আলু, ভুট্টা, গম ও টমেটো বা অন্য ফলন চাষ করছে। রবি শস্যের জমিতে তিল বা সরিষা চাষ হচ্ছে। তাহলে কি আমরা অর্থকরী ফসল রফতানি করে চাল আমদানি করবো? আগামী ২০-৩০ বছর পর কৃষি কোন দিকে যাবে? হয়তো বাণিজ্যিক কৃষি আসবে, তবে তারা ধান চাষে যাবে না। আবার জমিহীন চাষীও জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করবে। আর প্রান্তিকে কৃষক হয়তো খরপোষ বজায় রাখার জন্য কোনোমতো টিকে থাকবে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন বাড়বে না। 


আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড.হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জমির স্বল্পতার পরও সিলেট ও সাতক্ষীরার মতো কিছু এলাকায় অনেক পতিত জমি রয়ে যাচ্ছে। আর কৃষিকে শুধু খাদ্য নিরাপত্তার দৃষ্টিতে না থেকে রফতানির নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে হবে। আগামীর প্রবৃদ্ধির চলক হতে পারে কৃষি। তবে বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল এমনটা মনে করছেন না। তিনি বলেন, জমির স্বল্পতা থাকায় কৃষি এখানে প্রবৃদ্ধির চলক হতে পারবে না। বরং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজে আসতে পারে কৃষি। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বলেন, অনেক মেগা প্রকল্প ও রাস্তা নির্মাণে সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার যদিও ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, তবে এটা সাময়িক পদক্ষেপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, বাণিজ্যিক কৃষিকে কিছুটা উৎসাহ দেয়া যায়। তবে বড় আকারে বাণিজ্যিকিকরণ নয়। জমি থাকলেও অনেক কৃষক হয়তো কৃষি থেকে বেরিয়ে আসবে। তাই ক্ষুদ্র চাষীদের অর্থায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অবশ্যই কৃষি প্রবৃদ্ধির চলক হতে পারে। ভিয়েতনাম বছরে ৪ বিলিয়ন ডলারের কফি রফতানি করছে। আমরাও বিভিন্ন ফসলে নজর দিতে পারি। বছরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। তাই আমরা সরিষায় উৎপাদন বাড়াচ্ছি। যাতে আমদানি নির্ভরতা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। তবে সমন্বয় করাটাই সমস্যা। কৃষক ধান চাষে আগ্রহী থাকছে না। আগামী ৫ বছরে কৃষিতে আমরা ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবো। পণ্য সংরক্ষণ, সেচ ব্যবস্থা ও পরিবেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কাজ করবো। 

সভাপতির বক্তব্যে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে কৃষি খাতে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। শুল্ক যৌক্তিক করতে হবে।কৃচ্ছ্রতার সময়ে আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত ফসলের দিকে যেতে হবে। আমাদের ৪০ শতাংশ মানুষ এখনো কৃষি নির্ভর। চীন ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হলেও সেখানে কৃষির উপর নির্ভরতা রয়েছে ২৫ শতাংশ মানুষের। তাই আমাদের কৃষি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলে হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন