ফরাসি রাষ্ট্রদূতের ব্রিফিং

প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফরের সম্ভাবনা রয়েছে

বাসস

ছবি : বাসস

ঢাকায় ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়ে এবং বাংলাদেশের জন্য স্যাটেলাইট প্রদানের জন্য এয়ারবাস চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল রাষ্ট্রদূত তার বাসভবনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) আসন্ন সফর প্যারিসে হবে। তারিখ এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।’

ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‌বর্তমানে এয়ারবাস দুটি ভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে উড়োজাহাজ বিক্রি করার জন্য এবং অন্যটি স্যাটেলাইট সিস্টেম সরবরাহ করা, যা বাংলাদেশ অর্জন করতে চায়। উভয় আলোচনাই চলছে এবং আমরা আশা করি যে, শিগগিরই চূড়ান্তকরণ ও ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‌বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের সময় চুক্তিগুলো সই হতে পারে।’

ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‌প্যারিস মহাকাশ সংযোগ, প্রতিরক্ষা, ডিজিটাল ও সাইবার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছে।’

ফরাসি ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে মারি মাসদুপুই বলেন, ‘‌আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এবং সবার জন্য অভিন্ন সমৃদ্ধির সঙ্গে মুক্ত, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক"ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে ঢাকা ও প্যারিস একই অবস্থানে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘‌আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অবশ্যই ফ্রান্সের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আপনার দেশের অবস্থানের কারণে, আপনাদের গুরুত্বের কারণে, জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিপ্রেক্ষিতে এ রূপরেখা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা ও প্যারিস একে অন্যের সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝে বলে একে অন্যকে সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌বিশ্বের অর্থনীতিতে, বিশ্বের মানবিক গতিশীলতায় এবং সংস্কৃতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি অত্যন্ত সহযোগিতামূলক। প্যারিস মনে করে এ অঞ্চলের সবার সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’

এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ উত্তরণের পথে রফতানি বাস্কেটকে বহুমুখী করা এবং শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি, খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ ও প্রকৌশলের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ও ফরাসি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ লক্ষ করছে।’

তিনি বলেন, ‘‌আমরা ফ্রান্সে ফার্মা বা আরএমজি, খুচরা পণ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কোম্পানির সম্ভাব্য বিনিয়োগের খোঁজ শুরু করেছি।’ ফ্রান্স আত্মবিশ্বাসী যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‌রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ফ্রান্সের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক তথ্যের হেরফের হয়েছে।’

মারি মাসদুপুই জানান, তিনি লক্ষ করেছেন কিছু বাংলাদেশী ইউটিউব চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়া কয়েকটি ভিডিও আপলোড করেছে, যাতে বাংলাদেশীদের বোঝানো হয়েছে যে, ইউক্রেনে ফ্রান্সের সৈন্য রয়েছে। কিছু রেজিমেন্ট, ইউনিট বা ব্যাটালিয়নের নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‌এটি একমাত্র দেশ নয় যেখানে এমনটি ঘটছে, তবে এটি কেবল দেখাচ্ছে যে, বর্তমান রাশিয়ার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ তাদের টার্গেট দেশগুলোর মধ্যে একটি।’ 

তিনি দাবি করেন যে, ফ্রান্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে রাশিয়া থেকে উদ্ভূত তথ্য বিভ্রান্তির প্রচারণার সম্মুখীন হয়েছে ফ্রান্স।

গাজা ইস্যুতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‌প্যারিস যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং দেখতে চায় যে, ইসরায়েল মানবিক আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে।’ তার দেশ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে চায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন