সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত: বাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

সুন্দরবনে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ বলেন, ‘বারবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় বন বিভাগ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না।’

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘‌বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন: কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা।

নূর আলম শেখ বলেন, ‘‌সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গণমাধ্যমে এসেছে গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫-২৬ বার আগুন লেগেছে। সরকারি হিসাবে শতাধিক একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। এর দায়ভার বন বিভাগকেই নিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌স্থানীয় জনগোষ্ঠী, পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে সুন্দরবনে অপরিকল্পিত খাল খনন এবং অতীতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার কারণেই আমুরবুনিয়ায় চার বছর পর আবারো অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলো।’

নীতিনির্ধারকদের কাছে সুন্দরবন আজও গুরুত্বহীন দাবি করে নূর আলম শেখ বলেন, ‘‌একজন বনজীবীর কাছে সুন্দরবনের আর্থিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। সুন্দরবনসংলগ্ন প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ বনের ওপর নির্ভরশীল। সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতান্ত্রিক সেবা প্রদান করে। গবেষণায় সুন্দরবনের ২৪টি প্রতিবেশসেবার কথা উঠে এসেছে। প্রতি হেক্টর সুন্দরবনের প্রতিবেশসেবার আর্থিক মূল্য ৪৫৬ থেকে ১ হাজার ১৯২ ডলার। এ হিসাবে বছরে আমাদের সুন্দরবন ২৭ কোটি থেকে ৭১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রতিবেশসেবা প্রদান করে চলেছে।’

বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‌দক্ষিণ এশিয়ার বা বাংলাদেশের ফুসফুসখ্যাত সুন্দরবন আজ ধ্বংসের মুখে। বারবার বনে আগুন লাগছে। এর থেকে সুন্দরবনকে ঠিক রাখতে আমাদের সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে হবে। সুন্দরবন দুষ্টের সহজ গমন হলেও গবেষকদের জন্য দুর্গম।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘সুন্দরবনের এসব ঘটনাকে প্রাকৃতিক কারণ বলে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় মৌয়ালদেরও অভিযুক্ত করা হয়। তাদের পক্ষে এসব আগুন লাগানো সম্ভব নয়। বস্তুত মুনাফালোভীরাই পরিকল্পনা করে আগুন লাগিয়েছে।’ সুন্দরবনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদেরকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী প্রধান জাকির হোসেন বলেন, ‘‌নির্দিষ্ট জায়গায় মার্চ-এপ্রিলেই বারবার আগুন লাগছে। এ সময়ে প্রয়োজনে সেখানে সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের বনাঞ্চল রক্ষার জন্য সব শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠন করা দরকার। যারা ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে এবং ছয় মাস অন্তর অন্তর হালনাগাদ তথ্য দেবে।’

সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড বন্ধে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৫টি সুপারিশ করেছে বাপা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী সুপারিশগুলো উত্থাপন করেন।

আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ও অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন