১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে খসড়া রফতানি নীতিমালা অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

রফতানির মাধ্যমে ১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪-২৭ মেয়াদের খসড়া রফতানি নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। পরবর্তী সময়ে এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। 

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো, কভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেয়া, রফতানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক কৌশল নেয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন রফতানি নীতিমালা করা হয়েছে। রফতানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২০২৪-২৭ মেয়াদে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রফতানি প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করা বিভিন্ন ধাপ এখানে (রফতানি নীতি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া খাতের সম্ভাবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা, যেমন সবজি, হস্ত ও কারু পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতে স্পিনিং, ফ্যাব্রিকস, ম্যানুফ্যাকচারিং, ডায়িং, প্রিন্টিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওষুধ শিল্প ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হস্তশিল্পকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা এবং শর্তসাপেক্ষে রফতানি পণ্য তালিকা হালনাগাদ ও এইচএস কোডের হেডিংসহ উল্লেখ করা হয়েছে। রফতানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি ও রফতানি সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রফতানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রফতানি নীতি প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যমান রফতানি নীতি ২০২১-২৪-এর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এ ধারাবাহিকতায় রফতানি নীতি ২০২৪-২৭-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে গতকাল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয়ের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি বা স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের মেয়াদ চলতি বছরের ২৬ মে শেষ হয়ে যাবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ১৯টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে ২৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের চার জেলা সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে বাফার গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পে ১২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে হাউজিং কলোনি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পূর্তকাজের ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৪৭৫ টাকা। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ও এসএসএল। প্রকল্পের আওতায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০১ টাকা ৯৪ পয়সা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ৪৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে চুক্তিমূল্য বেড়ে হয়েছে ১২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ৫০৮ টাকা। সভায় ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর শূন্য ৩ দশমিক ৩-এর আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১১ কোটি ৭৩ হাজার ১৭৩ টাকা ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের ভেরিয়েশন বাবদ ৩ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ২৫ টাকা ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আরেক প্যাকেজে ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিলের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ঋণ চুক্তির অব্যবহৃত ঋণ ব্যবহার করে অতিরিক্ত মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মূল চুক্তিমূল্য ৬৫৮ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার ৬৩ টাকা। ভেরিয়েশন ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা (সিডি-ভ্যাট ছাড়া)। সিডি-ভ্যাট বাবদ খরচ ৩২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার ৬০৬ টাকা। সংশোধিত চুক্তিমূল্য ১ হাজার ১৬০ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৯ টাকা (সিডি-ভ্যাটসহ)।

খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি লটে ২৫টি নতুন উপকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৬০৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৪ টাকা।

রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জন্য কানাডা, কাতার, সৌদি আরব এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সার কিনতে খরচ হবে ৬৩২ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন এমওপি এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন