ফার্মেসি

ফার্মেসিতে কেন পড়ব?

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ফার্মেসি বা ওষুধবিজ্ঞান একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়, যা স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ওষুধের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, ওষুধ নিয়ে গবেষণা, নতুন ওষুধ উদ্ভাবন, উৎপাদন, প্রস্তুত, বিতরণ ও বিতরণ-পরবর্তী পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে ফার্মেসি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। করোনা মহামারীতে যখন সারা বিশ্ব জর্জরিত, এ মহামারীতে বিশ্বের কোটি মানুষের জীবন কীভাবে রক্ষা পাবে-এ প্রশ্ন যখন সমগ্র চিকিৎসাজগতের মূল আলোচ্য বিষয়, তখন নীরবে-নিভৃতে অবিচল গবেষণা করে গেছেন একদল ওষুধবিজ্ঞানী বা ফার্মাসিস্টরা।

করোনামুক্ত একটি নতুন বিশ্ব উপহার দিতে জীবন বাজি রেখে তারা লড়ে গেছেন দিনরাত। তাদের শ্রমেই বিশ্ব নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এ কথা তাই রাখঢাক না রেখেই বলা যায়। শুধু করোনা মহামারীই নয়, প্রতিনিয়তই নতুন নতুন রোগের খবর আসে। আর নতুন রোগের দেখা পেলেই ফার্মাসিস্টরা উঠেপড়ে লাগেন তার প্রতিষেধক আবিষ্কারে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার লড়াইয়ে সম্মুখ যোদ্ধা বলা যায় ফার্মাসিস্টদেরই।

বিশ্বব্যাপী এ পেশায় কাজের সুযোগ অত্যন্ত বিস্তৃত। কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট, হসপিটাল ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্ট, রিসার্চ ফার্মাসিস্ট, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস স্পেশালিস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে একজন ফার্মাসিস্ট সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। একজন কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট রিটেইল সেটিংসে কাজ করেন, ওষুধ সরবরাহ করেন এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করেন। হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরা নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করেন, অন্য পেশাদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। ক্লিনিকাল ফার্মাসিস্টরা বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্র জুড়ে রোগীদের জন্য ওষুধ থেরাপি অপ্টিমাইজ করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টরা ওষুধের আবিষ্কার, উৎপাদন, বিতরণ ও বিতরণ-পরবর্তী পর্যালোচনা-পর্যবেক্ষণে অবদান রাখেন। গবেষণা ফার্মাসিস্টরা একাডেমিয়া, ফার্মাসিউটিক্যালস বা সরকারের মধ্যে ড্রাগ-সম্পর্কিত গবেষণায় নিযুক্ত হন। ফার্মাসিউটিক্যাল বিক্রয় প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাছে ওষুধ প্রচার করেন। একাডেমিক ফার্মাসিস্টরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৭২ সালে যেখানে দেশের বার্ষিক চাহিদার ৮০-৯০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করা হতো। এখন আমাদের দেশের বার্ষিক চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এখন পৃথিবীর ১৬৬টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানির জন্য অনুমোদিত ও প্রডাক্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে ১৪৫টি দেশে ওষুধ রফতানির পাশাপাশি ওষুধের কিছু কাঁচামালও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে। দেশের এ খাতের উন্নতির পেছনে ফার্মেসি বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা অবদান রাখছেন।

ফার্মেসির সিলেবাসে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিষয়গুলো থাকে। তাই একজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিষয়ক যেকোনো বিষয়ে মাস্টার্স এবং পরবর্তী সময়ে পিএইচডি করার সুযোগ পান। মাইক্রোবায়োলজি, জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রাথমিক জ্ঞান ফার্মেসি ক্যারিকুলামে থাকায় ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে খুব সহজে অন্য যেকোনো বিভাগ থেকে এগিয়ে থাকা যায়। 

চার বছরের স্নাতক প্রোগ্রাম ইনঅর্গানিক, অর্গানিক, ফিজিক্যাল ফার্মেসি, মেডিসিনাল ফার্মেসি, ফার্মাকোগনোসি, ফার্মাসিউটিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি এবং কসমেটোলজি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি হসপিটাল এবং কমিউনিটি ফার্মেসি, ইমিউনোলজি, ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং এবং সেলস, ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট এবং ইনভেনটরি কন্ট্রোল, ফার্মাসিউটিক্যাল রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স, বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিষয়গুলো পড়ানো হয়। পাঠ্যক্রমটি তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং ব্যবহারিক দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে, যার লক্ষ্য ওষুধ শিল্প, হসপিটাল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা পরিচালনা করতে সক্ষম দক্ষ পেশাদার তৈরি করা।

ফার্মেসিতে অনেক বেশি কাজের সুযোগ থাকায় এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার বাছাই করা সহজ হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জনগণের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং সরকারি সহায়তায় বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এসব কোম্পানিতে গবেষণা ও উন্নয়ন, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বিপণন, বিক্রয়সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে।

ড. ইশরাত জাহান বুলবুল

সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন