পাটজাত পণ্য নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে সরকার: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে সরকার নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব সোনালী আঁশ পাট বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাট শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাট খাতে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে সরকার। বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রথম সভায় পাটজাত পণ্যসহ তিনটি খাতকে তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে যেভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে তেমন সহায়তা দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে তিন দিনব্যাপী ‘বহুমুখী পাট পণ্যের একক মেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এ মেলার আয়োজন করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য এ মেলা উন্মুক্ত থাকবে। জেডিপিসির আওতাভুক্ত অন্তত ২৮টি স্টল মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।

পাটমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। পাট পণ্যের উৎপাদন খরচ যেসব দেশে সবচেয়ে কম তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পাটের তৈরি গৃহসজ্জার পণ্যের চাহিদার পাশাপাশি পাটের তৈরি শপিং ব্যাগ, জিওটেক্সটাইল ও ফ্লোর কভারের চাহিদাও বাড়ছে। পাটকাঠির তৈরি চারকোলের চাহিদাও রয়েছে চীনসহ বিভিন্ন দেশে। এ ছাড়া পাটভিত্তিক জিওটেক্সটাইলের বৈশ্বিক বাজারের আকার ক্রমে বেড়েই চলেছে। এসব সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা পাটের উৎপাদনের দিকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছি, তেমনি মূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদনেও জোর দিচ্ছি। এজন্য জেডিপিসি বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন, ব্যবহার ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, পাট পণ্য রফতানিকারক এবং সংশ্লিষ্টরা পাটের উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট পণ্য নিয়ে গবেষণা, নকশার উন্নয়ন, বিপণনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি সমন্বিত পথ নকশা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। আমরা শিগগিরই এ সংক্রান্ত পথ নকশা প্রণয়ন ও তা যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যক্রম গ্রহণ করব।

পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান এবং সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম মেলার আয়োজন করে পাট পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য জেডিপিসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, বিএনপি বিভিন্ন সময় এই দেশকে শাসন, শোষণ ও লুটের জন্য ভারত জুজুর ভয় দেখিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। আমরা সে কথা ভুলিনি, এ জাতি ভুলে যায়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছিলেন, নৌকায় ভোট দিলে মসজিদে আজানের ধ্বনি শোনা যাবে না, হিন্দুদের উলুধ্বনি শোনা যাবে। আমি সে কারণে বিএনপিকে বলতে চাই, যখন সব ইস্যু তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এখন তারা পাগলের প্রলাপ বকছে। ভারত বিরোধিতার নামে পাকিস্তানের চিন্তা চেতনা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল তাদের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ। কিন্তু এ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল, সংঘবদ্ধ ছিল।

জেডিপিসির উদ্যোক্তারা ২৮২ রকমের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করেছে; যা পাটপণ্য হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। জেডিপিসি বাংলাদেশে পাটপণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জিনাত আরা, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নূরুজ্জামান, জেডিপিসির নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) গোপাল চন্দ্র দাস প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন