অস্টিওমাইলাইটিস

হাড়ের গঠন ও সুস্থতায় করণীয়

অধ্যাপক ডা. শংকর নারায়ণ দাস

ছবি: নাভ ইমপেরিয়াল হসপিটাল

হাড় দৈহিক কাঠামো গঠন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষা প্রদান বা ক্যালসিয়াম সঞ্চয় করে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। সুস্থ-সবল জীবনের জন্য মজবুত ও সুস্থ হাড়ের বিকল্প নেই। আর শৈশব ও কৈশোরেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হয়।

হাড়ের গঠন ও সুস্থতা

দেহের ভেতর ক্রমাগত হাড়গুলোর পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত চালু থাকে। এর পর থেকে নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন যে হারে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে তার তুলনায় বেশি হারে ক্ষয় হয়। এ হাড় ক্ষয় ও গঠন-চক্রে সমস্যা হলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি তৈরি হয়।

এটি একধরনের হাড় ক্ষয়জনিত রোগ। এতে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই উল্লিখিত বয়স পর্যন্ত যদি সর্বোচ্চ পরিমাণ হাড়ের ভর অর্জন করা যায় এবং ক্ষয়ের পরিমাণ কম রাখা যায় তাহলে এ অতিরিক্ত হাড় দেহে সঞ্চিত থাকে। এতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওপোরোসিসসহ হাড়ের বিভিন্ন রোগের যে ঝুঁকি তা অনেকটাই হ্রাস পায়।

হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে যে বিষয়গুলো

কতগুলো বিষয় আছে যেগুলোর কারণে হাড়ের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রভাবিত হতে পারে। যেমন—

খাদ্যাভ্যাস: দৈনন্দিন খাবারে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণে ঘাটতি থাকলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, দ্রুত হাড় ক্ষয় হতে থাকে। এছাড়া অধিক চর্বিযুক্ত খাবার বা খাবারে অতিরিক্ত লবণ খেলেও সমস্যা হয়। বেশি পরিমাণে কোমল পানীয় পান বা চা-কফি পান করলেও হাড়ের সুস্থতা বাধাগ্রস্ত হয়।

শারীরিক ক্রিয়াকলাপ: যারা অলস প্রকৃতির, কায়িক পরিশ্রম করেন না বা একদমই শরীরচর্চার অভ্যাস নেই, অন্যদের তুলনায় তাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি।

ধূমপান ও মদ্যপান: নিয়মিত ধূমপান, তামাক খাওয়া বা মদ্যপানের ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়।

লিঙ্গভেদ: পুরুষদের তুলনায় নারীদের হাড়ের টিস্যু কম। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের হাড় ক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকি বেশি।

শারীরিক আকৃতি: অতিশয় হালকা-পাতলা গড়নের দেহবিশিষ্ট মানুষের হাড়ের রোগের ঝুঁকি রয়েছে।

বয়স: বয়সের তুলনায় যদি হাড় বেশি সরু ও দুর্বল থাকে তাহলে হাড়ের রোগ হতে পারে।

হরমোনের মাত্রা: থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উপস্থিতি হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি তৈরি করে। নারীদের মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এতে হাড় ক্ষয় হয় অনেক বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হলে হাড়ের ভর ও ঘনত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়

শক্ত ও সুস্থ হাড় গঠনের জন্য কিছু বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। যেমন—

খাবার-দাবার: হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে—

 ক্যালসিয়াম

 ম্যাগনেশিয়াম

 পটাশিয়াম

 আমিষ

 ভিটামিন সি

 ভিটামিন ডি

 ভিটামিন কে

ক্যালসিয়াম: হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ ও চল্লিশোর্ধ্ব নারীর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। এ ঘাটতি পূরণে দুধ, দই, সয়াবিন, ব্রকলি এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়া যেতে পারে।

ম্যাগনেশিয়াম: মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, লাল চাল, শিমের বিচি, সূর্যমুখীর বীজ, সামুদ্রিক মাছ, ডার্ক চকোলেট, বাঁধাকপি প্রভৃতিতে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে।

পটাশিয়াম: সাধারণত সব ধরনের শাকসবজি ও ফলে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তবে কলা, তরমুজ, পেঁপে, টমেটো, গাজর, বাদাম, ডাবের পানি, লেটুসপাতা ইত্যাদিতে অধিক পরিমাণে পটাশিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে।

আমিষ: উচ্চমানের আমিষজাতীয় খাদ্য হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রাণিজ আমিষের উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের সাদা অংশ। উদ্ভিজ্জ আমিষের মধ্যে রয়েছে শিম, শিমের বিচি, ডাল, বাদাম।

ভিটামিন সি: ভিটামিন সি হাড়ের গঠনে সহায়তা এবং ক্ষয় রোধ করে। লেবু, কমলা লেবু, আনারস, পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙা, আমলকী, আম ইত্যাদিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

ভিটামিন ডি: দেহে ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ের জন্য ভিটামিন অপরিহার্য। তেলযুক্ত সামুদ্রিক মাছ, ডিমের হলুদ অংশে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। সূর্যের আলো ভিটামিন ডির সর্বোৎকৃষ্ট উৎস। প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যের আলোতে সময় কাটান।

ভিটামিন কে: হাড়ের সুস্থতায় ভিটামিন কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। হাড়ে ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এটি। ব্রকলি, পালং শাক, বাঁধাকপি, লেটুসপাতায় ভিটামিন কে পাওয়া যায়।

কায়িক শ্রম ও শরীরচর্চা

আলস্য পরিহার করুন। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন। লিফট এড়িয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়াদৌড়ি করতে পারলে খুব ভালো হয়।

বদভ্যাস ত্যাগ করুন: ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে শিগগিরই ছেড়ে দিন।

লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন