উপজেলা নির্বাচন

বরাদ্দের আগেই ‘নির্দিষ্ট প্রতীকে’ ভোট চাওয়ায় প্রার্থীকে শোকজ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরাদ্দের আগেই ‘নির্দিষ্ট প্রতীকে’ ভোট চাওয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম মাসুমকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ শোকজ করা হয়।

শোকজ নোটিসে বলা হয়, রিয়াজুল ইসলাম ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার গোকুলনগর জুনিয়র বন্ধুমহল ক্লাব ও গোকুলনগর যুব সম্প্রদায়ের উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামী জলসা ও তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বক্তব্য দেন। মুসল্লি ও এলাকাবাসীর কাছে দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চেয়েছেন তিনি। প্রতীক বরাদ্দের আগেই ফেসবুক আইডি থেকে ‘‌দোয়াত কলম মার্কা’য় ভোট চেয়েছেন। এছাড়া গতকাল দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পশ্চিম হাগুড়িয়া জামে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লি ও এলাকাবাসীর কাছে দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চেয়েছেন। এটা নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধি-৫ (১) লঙ্ঘনের দায়ে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল বেলা সাড়ে ৩টায় সশরীরে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘‌চিঠি পেয়েছি। ইসলামী জলসা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে না, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৫-৭ জনের বেশি মানুষ সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা করা যাবে না, এটা জানতাম। আর নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট চাওয়ার ব্যাপারটা অসত্য। অনেকে প্রতীক জিজ্ঞেস করলে বলা হয়েছে আমি ফার্স্ট চয়েস দিয়েছি, দোয়াত কলম। সেটা হতেও পারে, নাও হতে পারে।’

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মো. সায়েদুর রহমান স্বপন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই।

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা থাকলেও সায়েদুর রহমান ভোটের মাঠে থাকবেন বলে জোরালো ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি এলাকায় প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এমন তো নয় যে আমি মন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছি। কিংবা দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি ৩০ বছর ধরে কুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। কুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি আমার অবস্থান থেকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দল থেকে বলা হয়েছে মন্ত্রী-এমপিরা যেন ভোটে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার না করেন। এক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রী তো কাউকে কিছু বলছেন না। উনি আমাকে বলে দিয়েছেন সুষ্ঠু ভোট হবে। সে কারণে আমি প্রার্থী হয়েছি। আমি ভোটে লড়ব, এটা নিশ্চিত। আর সবচয়ে বড় কথা, এটা তো আর দলীয় কোনো নির্বাচন নয়।’

তবে সায়েদুর রহমানের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, আইনমন্ত্রীর সাবেক এপিএস অ্যাডভোকেট রাশেদুর কাওছার ভুইয়া জীবন অভিযোগ করেন, ‘‌সায়েদুর রহমান সব জায়গার বলছেন মন্ত্রী ওনার আত্মীয়।’ এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অন্যদিকে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। হামলা ও অপহরণের শিকার অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান তিনি। এ সময় তার খোঁজখবর নেন। সেখান থেকে প্রতিমন্ত্রী তার শ্যালককে ফোন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস।

সম্প্রতি সিংড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ওরফে পাশাকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে মারধর করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। পরে দেলোয়ার হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন দেলোয়ার। সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেল এ ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন হামলা ও অপহরণের অভিযোগে আটক সুমন আহমেদ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগামী তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয় নোটিসে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন