বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস

জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী অঞ্চল। জ্বালানির বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরমুজ প্রণালি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রফতানিকারকরা প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন করে, যা বৈশ্বিক ব্যবহারের এক-পঞ্চমাংশ। এ অঞ্চলে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তা আরো প্রকট হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানিটির সরবরাহ ঝুঁকির মুখে পড়বে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে ১০০ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অয়েলপ্রাইস ডটকমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইসিই ‍ফিউচারস ইউরোপে গতকাল জুনে সরবরাহ চুক্তিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ২ সেন্টে লেনদেন হয়েছে। অন্যদিক নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) মে মাসে সরবরাহ চুক্তিতে দাম ছিল ৮৫ ডলার ৩৫ সেন্ট। 

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত যদি জ্বালানি তেলের সরবরাহকে সরাসরি ব্যাহত করে, তবে প্রতি ব্যারেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক সিটি গ্রুপের এক বিবৃতিতেও একই আভাস পাওয়া গেছে।

লিপো অয়েল অ্যাসোসিয়েটস জানায়, ইরান হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার চলাচল বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে সরবরাহ ধারা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এর প্রভাবে প্রতি ব্যারেলের দাম উঠতে পারে ১৩০ ডলারে। লিপো অয়েল অ্যাসোসিয়েটসের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডি লিপো বলেন, ‘‌ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কিংবা রফতানি অবকাঠামোয় যেকোনো ধরনের হামলা ব্রেন্টের দামকে বড় উল্লম্ফনের দিকে ঠেলে দেবে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য ঠেকতে পারে ১০০ ডলারে। এছাড়া হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়াতে পারে ১২০-১৩০ ডলারে।’

বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সোসিয়েতে জেনেরালের হিসাব অনুযায়ী, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়লে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলারে পৌঁছতে পারে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ব্রেন্টের মূল্য পূর্বাভাস ১০ ডলার বাড়িয়েছে।

তথ্য বলছে, সম্প্রতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে প্রসার ঘটছে চীনের অর্থনীতিতে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পরই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম এক দফা বাড়ে। কারণ চীনে ইতিবাচক অর্থনীতির মানে হলো সেখানে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা ও আমদানি বাড়বে। তবে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ, খুচরা বিক্রি ও শিল্প খাতের উৎপাদনসহ বেশকিছু বিষয় চাহিদা বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গত সপ্তাহে বেড়ে প্রায় ছয় মাসের সর্বোচ্চে উঠে গিয়েছিল। তবে গত সোমবার তা কমে যায়। কারণ ইসরায়েলে ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি। ফলে সংঘাতের তীব্রতা নিয়েও উদ্বেগ কিছুটা কম ছিল। তবে ইসরায়েল এ হামলার জবাব দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ফের তীব্রতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এতে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের অন্যতম বৃহৎ সদস্য দেশ ইরান। দেশটি প্রতিদিন ৩০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোয় দেশটির উত্তোলন ও রফতানি দুটোই ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশ্ববাজারে দাম বাড়াতে গত বছর কয়েক দফায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি কমিয়েছে ওপেক এবং সহযোগী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। ফলে জ্বালানিটির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিষয়টিও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন