পিআরআইয়ের গবেষণা

ব্যক্তিগত আয়কর ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়াতে পারলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ০.৫ শতাংশীয় পয়েন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সমপরিমাণ মাথাপিছু আয়ের অনেক দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে দুই গুণ, আড়াই গুণ। অথচ বছরের পর বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭-এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের আয়কর আয়ের ওপর জোর দিতে বলছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। সংস্থাটির একটি গবেষণা বলছে, ২ শতাংশীয় পয়েন্ট ব্যক্তিগত আয়কর আয় দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।

গতকাল রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়াতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় করতে হবে। এর ফলে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। আবার ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়তি রাজস্ব আয় বার্ষিক নমিনাল জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, ‘‌প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির পাশাপাশি কর প্রশাসনের উন্নতি ও ফাঁকফোকর কমাতে কর ব্যবস্থা সংস্কার করা উচিত। এটি মূল্যস্ফীতি বাড়ানো ছাড়াই মূল্য সংযোজন কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়াবে।’

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ও টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে দাবি করে এ গবেষক বলেন, ‘‌বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বৈশ্বিক গড় অনুপাতের নিচে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভারতের চেয়ে কম। রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণে সরকারের ব্যয়ও কম। কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে ব্যক্তিগত আয়কর আয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, মূল্য সংযোজন কর বাড়ানোর পরিবর্তে সংস্কার করা ও করপোরেট কর আয়ে বাড়তি নজর দেয়া জরুরি।’

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‌৭, ৮, ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশ উন্নত হতে পারেনি। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কর ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকবে, তবে তা কমিয়ে আনতে হবে। শুধু করছাড় কমিয়ে আগামী অর্থবছরে বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা আয়ের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। করছাড় না কমিয়ে কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্থাপনা দিয়ে তা হবে না। এজন্য রাজস্ব খাতের মৌলিক সংস্কার দরকার। যেকোনো সরকার তার আমলের প্রথম দুই-তিন বছরেই সংস্কার কার্যক্রমে হাত দিতে পারে। নতুন সরকার এসেছে। এখনই রাজস্ব খাত সংস্কারের সময়। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার সময় এখনই।’

ড. আহসান এইচ মনসুরের কথায় সমর্থন দিয়ে পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘‌পৃথিবীর সব দেশেই রাজস্ব ঘাটতি আছে। কিন্তু ঘাটতির পুরোটা ধার করে কোনো দেশ লাভবান হয় না। এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব ব্যয় অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ থাকা উচিত। আমাদের দেশে বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের ১০ শতাংশ লোকের হাতে ৩০ শতাংশের বেশি জাতীয় আয় আছে। তাদের থেকে যদি কর আয় করা যায়, তাহলে রাজস্ব আয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে।’

পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, ‘‌বাংলাদেশে উচ্চ শুল্ক আরোপের সংস্কৃতি আছে। উচ্চ শুল্ক হার বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমদানি সংকোচন করার ফলে দেশের অর্থনীতি আরো শ্লথ হয়ে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলে বৈষম্য আরো বাড়বে। তৈরি পোশাক শিল্প প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানের। এ পণ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব। অনেক সময় রফতানির চেয়ে স্থানীয় বাজারেও পণ্যের দাম বেশি পাওয়া যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন