টাঙ্গাইল-রংপুর চার লেন প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : মারুফ রহমান ( ফাইল ছবি)

১৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। চার লেনের পাশাপাশি ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির দুই পাশে একটি করে সার্ভিস লেনও করা হচ্ছে। শুরুতে সড়কটির উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। ২০১৯ সালে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর পর কভিড মহামারীকে কারণ দেখিয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয় সওজ। বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। 

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছর মূল সড়কের কাজ শেষ হলেও তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হবে না। এজন্য অতিরিক্ত এক বছর সময় প্রয়োজন হবে। তবে মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। 

বর্তমানে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রথম চ্যালেঞ্জ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ। প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে গাইবান্ধায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। জেলা প্রশাসক কর্তৃক ভূমি হস্তান্তর কার্যক্রম বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এলেঙ্গা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করাকে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এখানেও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা রয়েছে। 

এর বাইরে উদ্ভূত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে নির্মাণসামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতা ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পেভমেন্ট (পিচ) নির্মাণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিটুমিনের সরবরাহ না পাওয়া নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে প্রাপ্ত বিটুমিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দেশীয় অন্যান্য উৎস থেকে যে বিটুমিন পাওয়া যায়, তার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন নয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মানের নয়। 

‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প ২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ড. ওয়ালিউর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে জানান, বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। 

প্রকল্পটি শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড। এ অংশের অগ্রগতি ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন করছে হেগো-মির আক্তারের জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ অংশের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। হাটিকামরুল থেকে বগুড়ার মির্জাপুর পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার কাজ করছে আব্দুল মোনেম, যার অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। 

মির্জাপুর থেকে বনানী পর্যন্ত ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছে সিপিসিএল-তান্তিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ অংশের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। বনানী থেকে মোকামতলা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন করছে কেএমসি-মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চার, যার অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। মোকামতলা থেকে রংপুরের মর্ডান মোড় পর্যন্ত ৮০ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছে চায়না কনস্ট্রাকশন সেভেস্থ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন করপোরেশন লিমিটেড। এ অংশের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এর বাইরে হাটিকুমরুলে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ইন্টারচেঞ্জ তৈরি করা হচ্ছে, যার অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটা জিনিস ছাড়া বাকি সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। গোবিন্দগঞ্জে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় জমি এখনো পাইনি। আশা করছি, ঈদের পর এ জমি আমরা পেয়ে যাব। অন্যদিকে হাটিকুমরুলে ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য জমি আমরা কিছুটা দেরিতে পেয়েছি। এলেঙ্গা ফ্লাইওভারের জমি নিয়েও কিছুটা জটিলতা আছে। দুটি ফ্লাইওভার ও একটি ইন্টারচেঞ্জ বাদে আমাদের সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পথে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন