লাখ লাখ ট্রেডারকে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না

ছবি : বণিক বার্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিন বছরের ছুটি নিয়ে আন্তঃসরকারি সংস্থা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিরডাপ) পরিচালক (গবেষণা) পদে যোগদান করেন ২০২০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী ড. হেলাল যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি ও সম্পদ অর্থনীতিতে পিএইচডি ও এমএস এবং ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ এবং আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানির একজন পরিচালক তিনি। মূল্যস্ফীতি, সিন্ডিকেট, বাজার ব্যবস্থাপনাসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবরিনা স্বর্ণা

আমাদের কৃষিপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কোথায়?

আমরা হয়তো হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের দাম ওঠানামা নিয়ে কথা বলি। বাজারে যে আলোচনাগুলো হয় সেগুলোও হাতেগোনা ওই কয়েকটি পণ্য নিয়েই, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার আমদানীকৃত। কিন্তু বাজারে শত শত কৃষিপণ্য আছে। আমরা যদি দেখি, গত এক যুগে কতগুলো কৃষিপণ্যের দাম ওঠানামা করেছে, খুব বেশি উদাহরণ আমরা পাব না। আমরা যদি পেঁয়াজের কথাই বলি, বছর দুয়েক আগে পেঁয়াজের দাম ৩০-৩৫ থেকে ৩০০ টাকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এমন এপিসোড আর কতটা হয়েছে গত এক যুগে? আর একবারও হয়নি। মাঝেমধ্যে এমন হয়েছে যে ৪০ টাকা দাম আছে, ৫-১০ টাকা বেড়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে আবার দাম কমে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের যে সাপ্লাই চেইন, বিশেষত পেঁয়াজের ক্ষেত্রে, সেটা মোটামুটি স্থিতিশীলই ছিল। আমরা যদি কাঁচামরিচের কথা বলি, কাঁচামরিচের দাম বেড়ে কতবার ১ হাজার টাকা বা ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছিল? কিছুদিন আগে, কয়েক সপ্তাহ হয়তো ৩০০ টাকায় ছিল। এখন আবার নেমে ৬০-৭০ টাকা হয়ে গেছে। এগুলো যেহেতু পচনশীল দ্রব্য, একটু ঘাটতি তৈরি হলে দাম বাড়বে। রমজানে আমরা যেমন দেখি বেগুন, পেঁয়াজের দাম বাড়ে, সেটা কিন্তু অল্প সময়ের জন্য। পরে আবার দাম কমে যায়। আবার উদাহরণস্বরূপ আমরা যদি চালের কথা বলি, চালের দাম তো শত শতবার বেড়েছে। কিন্তু আমরা যদি ১৯৭১ সাল, স্বাধীনতার পর থেকে হিসাব করি, সে অর্থে কিন্তু চালের প্রকৃত দাম কমেছে। 

সেই অর্থে বাজার ব্যবস্থাপনার কোনো ত্রুটি আমি দেখছি না। দাম বাড়লেই বাজার কাজ করছে না মনে করা উচিত নয়। দামের তুলনায় আয় পর্যাপ্ত না বাড়ায় কিংবা আয় কমায় দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বল্পমেয়াদে পণ্যের ঘাটতির জন্য দাম বাড়ছে। একটু ঘাটতির খবর মিডিয়া দিলেই অনেক বেশি ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বাজারে স্পেকুলেটিভ আচরণের কারণে। ব্যবসায়ী পণ্য ধরে রাখছে পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রির জন্য, ভোক্তা বেশি কিনছে আরো বেড়ে যাবে এ ভয়ে। ফলে ৫ শতাংশের ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৫০ শতাংশে। দাম বাড়ছে অনেক বেশি পরিমাণে। এ আচরণকে মিডিয়া বলছে সিন্ডিকেট। 

তবে এ কথা ঠিক যে দীর্ঘমেয়াদে দাম বাড়ছে উৎপাদন খরচ বা আমদানি খরচ বাড়ার কারণে। দারিদ্র্য বিমোচন আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধির ওপর আমরা যে গুরুত্ব দিচ্ছি তার ফল হলো বর্তমান উচ্চ দাম স্তর। ’৭১ সালের দাম স্তর এখন ৬০-৭০ গুণে দাঁড়িয়েছে আমার ধারণা। বেশির ভাগ মানুষের আয় তো সে অনুপাতে খুব একটা বাড়েনি। ফলে একটু দাম বাড়লেই খুব কষ্ট হয়। তাছাড়া গত এক-দেড় বছরে তো একটা বড় ধাক্কা লেগেছে দাম স্তরে। কিছু নীতিগত ভুলের কারণে ধাক্কাটা এসেছে একসঙ্গে। 

নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি কি স্বল্পতার কারণে হচ্ছে? যদি হয় তাহলে আমাদের স্বল্পতার কারণ কী? মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা কী? 

আমি আগেই বলেছি, আমরা যে দাম বাড়তে দেখছি, সেটা অসংখ্যবার নয়। কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে, কিন্তু সেটাও খুব বেশিবার নয়। যদি এক যুগ বা ২০ বছরে ফিরে দেখি, দাম স্থিতিশীলই ছিল। সম্প্রতি আমরা দেখছি খানিকটা অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা দোষারোপ করি মধ্যস্বত্বভোগীদের। কিন্তু সাপ্লাই চেইন যারা অপারেট করে, আমরা ফড়িয়া বলি, আড়তদার বলি, বেপারি বা পাইকার বলি, তাদের ছাড়া তো সুনামগঞ্জের উৎপাদিত চাল ঢাকার কলাবাগানে এসে পৌঁছবে না। ধান থেকে চাল করতে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং এ কাজে অনেক খরচও আছে। আবার সুনামগঞ্জ থেকে বাদামতলীতে চাল আনাকে আমরা বলি স্পেশাল ট্রান্সফরমেশন। অর্থাৎ একটা স্থান থেকে অন্য একটা স্থানে নিয়ে গেলাম। এখানেও অনেক খরচ এবং হাতবদলের বিষয় আছে। সেসব ভুলে গেলে তো চলবে না। এগুলো যদি আমরা হিসাব করি, দেখব প্রকৃত দাম ঠিকই আছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা গড়ে অনেক বেশি মুনাফা করছে না। তার পরও কৃষক টিকে আছেন। কেন? কারণ উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। যেখানে এক বিঘা জমিতে ১০ মণ ধান হতো, সেখানে এখন ৫০ মণ ধান হয়। আমরা চাল কম দামে খেতে পারছি। চালের উৎপাদন খরচের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু গরুর মাংস কেন আমরা কমে খেতে পারছি না? হঠাৎ এত বেশি দাম বেড়ে গেল? কারণ উৎপাদন কম উচ্চ খরচের কারণে। সুতরাং মনে রাখতে হবে যে দীর্ঘমেয়াদে দাম বাড়ার মূল কারণ উৎপাদন খরচ বা আমদানির খরচ। আর স্বল্পমেয়াদে এক বা দুই মাসের জন্য দাম বাড়ার কারণ চাহিদা ও জোগানের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

উৎপাদনের কথা যদি বলি তাহলে কৃষিনির্ভর দেশ হয়েও প্রতি বছর আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ ইত্যাদি উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানি করতে হচ্ছে কেন? 

আমরা ৩ কোটি ৭০ থেকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন করি। কখনো কখনো ১৫-২০ লাখ টন পর্যন্ত চাল ঘাটতি হয় যা আমরা আমদানি করি। আর গমের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা বলি যে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিছুদিন আগের খবর, বাংলাদেশ খাদ্য আমদানিতে বিশ্বে তৃতীয়। আমরা যদি খাদ্য আমদানিতে তৃতীয় হই, তাহলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ কীভাবে? প্রায় চার কোটি টন চাল আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি, এটা আমাদের সফলতা অবশ্যই। এরপর যা প্রয়োজন হয়, সেটা আমরা আমদানি করি। কিন্তু আভিধানিক ভাষায় যদি বলি, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে আমাদের যা প্রয়োজন তার চেয়ে কয়েক শতাংশ বেশি উৎপাদন করতে হবে। যেন কোনো দুর্যোগের কবলে পড়লে তা মোকাবেলা করতে আমাদের বাইরে থেকে আমদানি করতে না হয়। সেটা হওয়া উচিত স্বয়ংসম্পূর্ণের সংজ্ঞা। কয়েক দিন আগে শুনলাম গরুর মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমি তখন বললাম অবশ্যই। কারণ গরুর মাংস তো আমরা অনেক রফতানি করতে পারব। জিজ্ঞাসা করল, “কীভাবে?” আমি বললাম, আমরা যদি গরুর মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা করে দিই, তাহলে দেশে আর কেউ গরুর মাংস খাবে না। আমরা যা উৎপাদন করব, পুরোটাই রফতানি করতে পারব। শুনে থতমত খেয়ে গেল। মূল কথা হলো, স্বয়ংসম্পূর্ণের কথা বললে আমরা বলতে পারি, পাঙাশ মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। যে দাম আছে, সে দামে আমরা খেতে পারি, বাইরে থেকে আনতে হয় না। পোলট্রি মুরগির কথাও আমরা বলতে পারি, যা সাধারণের নাগালের মধ্যে। অর্থাৎ দাম এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দাম বাড়লে সাপ্লাই বাড়বে কিন্তু চাহিদা কমে যাবে। উৎপাদিত পণ্য যদি সবাই কিনে খেতে পারে এবং বাইরে থেকে আমদানি করতে না হয় তখন আমরা বলব যে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। 

কোনো একটা দেশ চাইলেই সব দরকারি পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না বা কোনো পণ্যের দরকার অনুযায়ী পুরোটা উৎপাদন করতে পারবে না বিভিন্ন কারণে। ফলে খানিকটা আমদানি করতে হয়। সমস্যা হলো যৎসামান্য আমদানি করলেও বিশ্ববাজারের দামটাই দরজার সামনে চলে আসে। 

একটা অভিযোগ সবসময় থাকে সিন্ডিকেট নিয়ে। দেখা যাচ্ছে উৎপাদন খরচ বাড়েনি, আমদানির খরচ বাড়েনি, সাপ্লাইও আছে কিন্তু দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে মজুদ করে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেন? 

অভিযোগ যা-ই হোক, স্বল্পমেয়াদে দাম কমে বাড়ে সাপ্লাই-ডিমান্ডের কারণেই। বলছে যে যোগসাজশ করে। কীভাবে যোগসাজশ করে? তারা বাজারে কম সেল করে। কৃত্রিমভাবে তারা বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি করে। এটা হলো অভিযোগ। কিন্তু আমরা যদি বাজার অর্থনীতির ম্যাকানিজম দেখি যে কোনো কারণে আগামী সপ্তাহে দাম বাড়বে, তাহলে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি রয়েসয়ে সেল করব। এ প্রসঙ্গে চলে আসে মজুদের কথা। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মজুদ হলো একটি সুস্থ আচরণ। পৃথিবীর সর্বত্র স্টোরেজ থাকে, থাকবে। ধরুন, জ্যৈষ্ঠ মাসে আমাদের চাল উৎপাদন হলো দুই কোটি টন। আমাদের লাগবে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টন। সরকার কিনে মজুদ করে ১০/১২ লাখ টন, সর্বোচ্চ ২০/২২ লাখ টন। তাহলে বাকি দেড় কোটি চাল কে মজুদ করে? মিলাররা মজুদ করে। তারপর তারা ধীরেসুস্থে বিক্রি করে। চৈত্র মাসে বিক্রি করে। এজন্য আমরা বলি জ্যৈষ্ঠ মাসের চাল আর চৈত্র মাসের চালটা ভিন্ন। এই যে যারা জ্যৈষ্ঠ মাসে চালটা কিনে রাখল, টাকা লগ্নি করল, এ টাকা তারা ব্যাংকে রাখলে সুদ পেত। মজুদের তো খরচ আছে। এটাকে রক্ষা করতে হবে, কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হবে যেন পোকায় না খায়। তারপর সে চাল চৈত্র মাসে গিয়ে বিক্রি হবে। আবার যদি আমদানি বেশি হয় তাহলে চালের মূল্য কমে যাবে, সে ঝুঁকিটাও তারা নেয়। এটাকে আমরা বলি টেম্পোরাল ট্রান্সফরমেশন। এ সময় থেকে আরেক সময়ে পণ্য নিয়ে যাওয়া। এরা মজুদ করছে বলেই এরা মুনাফালোভী, এ ধারণাটা খারাপ। কেউ যদি জ্যৈষ্ঠ মাসে চাল মজুদ না করে তাহলে চৈত্র মাসে আমরা কোথা থেকে খেতাম? বরং যারা ফসল উৎপাদনের সময় ফসল মজুদ করে লিন মৌসুমে বিক্রি করে, এটা একটা স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। 

এখন তারা যদি মজুদের কাজটা আদর্শিকভাবে করে থাকে, তাহলে এটা একটি সুস্থ আচরণ। কিন্তু তারা যদি কোনো ধরনের অসৎ চর্চা করে তবে তা অপরাধ। প্রমাণসাপেক্ষে সে আচরণ শাস্তিযোগ্য। একই সঙ্গে হাজার হাজার ডিলার যদি মনে করে যে আগামীতে সংকট হতে পারে, এখন একটু কম বিক্রি করি, সেটা আবার কোনো অপরাধ নয়। এটাকে বলে স্পেকুলেশন। অর্থাৎ প্রত্যাশা অনুযায়ী কম ক্রয়-বিক্রয় করা—আগামীতে দাম বাড়বে ভোক্তা হিসেবে আমি বেশি কিনে রাখলাম। আবার দাম বাড়বে ভেবে আমি কিনে রাখলাম পরবর্তী সময়ে বিক্রি করার জন্য। এই স্পেকুলেশনকে অর্থনীতির দৃষ্টি দিয়ে এবং পর্যবেক্ষণ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। কিছু হলেই বলে সিন্ডিকেটের দোষ। আমি তো শিশুকাল থেকেই সিন্ডিকেটের কথা শুনছি। সিন্ডিকেট থাকলে ধরছি না কেন, নাকি এটা একটা অদৃশ্য বলির পাঁঠা। আমরা ডায়াগনসিস যদি ভুল করি, যত ওষুধ দিই, ওষুধ কাজে লাগবে না। সিন্ডিকেটের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হয়েছে। আমরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট বলছি, কিন্তু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিতে পারছি না। কারণ আমাকে তো প্রমাণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আছে স্পেকুলেশন—যা সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলে অদৃশ্য হয়ে যায়। 

কিন্তু একটা অংশ তো আসলেই পণ্য গুদামজাত করে রাখে যার ফলে দামটা বেড়ে যায়। এ সমস্যাটা থেকে উত্তরণের উপায় কী? 

গুদামজাত তো করবেই কিন্তু ম্যানিপুলেট করছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যারা গুদামজাত করেছে, সময়মতো রিলিজ করছে নাকি সেটা দেখার বিষয়। আলুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে অনেকবার? কোল্ড স্টোরেজে আলু রেখেছে। দাম কমের কারণে বাজারে ছাড়েনি এজন্য যে খরচ উঠে আসবে না। তাতে যারা গুদামজাত করেছে তারাই সমস্যায় পড়েছে। তারা লাভ করেনি বরং তারাই লুজার। স্পেকুলেশন জিরো করা সম্ভব নয়, কিন্তু কমানো যায়। আমাদের এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট আছে। সেখানে একটা নিয়ম আছে যে কোন ধরনের ব্যবসায়ী কতটুকু পণ্য ধরে রাখতে পারে একটা নির্দিষ্ট সময়ে। এটা আমরা ঠিকমতো নির্ধারণ করতে পারি যেন গুদামজাত বেশি মাত্রায় না হয়। আরেকটি হলো, স্পেকুলেশন কেন হচ্ছে তা নজরে রাখা। 

প্রত্যাশাজনিত মজুদ, যাকে স্পেকুলেশন বলছেন সেই সমস্যাটা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

স্পেকুলেটিভ অবস্থা যেন তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারকে। সরবরাহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বছরের যে সময় আমদানীকৃত দেশে পণ্যের দাম কম থাকে, সে সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করতে হবে। যারা আমদানি করে তাদের পলিসির আওতায় এনে আমদানি করিয়ে নিতে হবে। 

ইন্ডিয়া যখন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলল তখন সবাই জানে যে সামনে যদি আমরা পেঁয়াজ না পাই তাহলে সংকট হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ইন্ডিয়ায় পেঁয়াজের দাম কম থাকে। ওই সময়ে আমাদের চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় সরবরাহ অনুযায়ী কতটুকু ঘাটতি আছে তা হিসাব করে পণ্য আমদানি করে ফেলতে হবে। পচনশীল হওয়ায় পেঁয়াজ বেশি দিন ধরে রাখা যায় না যদিও। অন্যান্য পণ্য যেমন চাল, তেল, চিনির ক্ষেত্রে তা করা যায়। আমদানিকারকরা কিন্তু সর্বদা সরবরাহের অবস্থা জানে। তারা যদি জানে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে, তারা কিন্তু পণ্য ধরে না রেখে বিক্রি করে। তাদের দিয়ে ওই সময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য আনাতে হবে। 

সেটা না করে লাখ লাখ ট্রেডারকে কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কখনো কন্ট্রোল করা যাবে না। গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা এ কথাই বলে। দাম বেঁধে দিয়েও হবে না, দৌড়াদৌড়ি করেও হবে না। সরবরাহকে স্থিতাবস্থায় রাখতে হবে। সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক না রেখে যদি বলি মজুদদার ধরো, তাহলে মজুদের অভাবেও আমরা আবার সংকটে পড়ব। 

দাম বাড়লেই আমদানি শুল্ক কমানো বা তুলে দেয়ার নীতি কি সঠিক মনে করেন? 

দাম বাড়লেই আমদানি শুল্ক তুলে দেয়ার নীতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। এ কারণে বিশ্ববাজারে দাম কম থাকার সময়ও আমদানিকারকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, শুল্ক কমলে আমদানি করবে এ আশায়। বরং কিছু নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবেই শুল্ক তুলে দিয়ে বিকল্প খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহের কথা ভাবতে হবে। 


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন