১৬ দিনের সফর শেষে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে গত সোমবার এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ছবি: পিএমও

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে গতকাল বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে দেশের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। সেখানে তাকে বিদায় জানাবেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। 

গত ১৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় নানা বৈঠকের পাশাপাশি অংশ নেন উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংবর্ধনায়ও যোগ দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন।

ওয়াশিংটন থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর লন্ডন পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এছাড়া যুক্তরাজ্যের রোহিঙ্গা এবং বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসাবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ড. রুশনারা আলীর নেতৃত্বে দেশটির অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনার ক্ষমা নেই: লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হলে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এক কমিউনিটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।’ 

নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করার বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগে ২৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।’ 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না। কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোঁকাবাজি করেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করেছে। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই জনগণ তাদের উৎখাত করে।’ দেশের মানুষ আর কখনো ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছেন। অনেকে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’ 

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সংস্কার করেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বক্স চালু এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।’ 

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বিএনপির আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি।’

প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার আহ্বান: যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা গতকাল লন্ডনে শেখ হাসিনার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য আপনাদের সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিদেশে অবস্থানকারী কতগুলো গোষ্ঠীর লোকজন ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা বিভিন্ন অপরাধ, অপকর্ম বা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়েছে বা অবৈধ কাজের কারণে চাকরি হারিয়েছে; তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই দেশের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে। তারা সরকারের কোনো ভালো ও উন্নয়নমূলক কাজ দেখে না, বরং তারা সারা বাংলাদেশে সবসময় শুধু সমস্যাই খুঁজে পায়।’

অপপ্রচার মোকাবেলায় ডিজিটাল ও সামাজিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যরা যেন দেশের মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার চালায়, সেটি লক্ষ রাখতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন