![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_346261_1.jpg?t=1720295122)
ভিজুয়াল আর্টিস্ট তামিমা সুলতানা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের চিত্রকলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক মাস আগে ঢাকায় তার প্রাচ্য ও দ্বৈতাদ্বৈতবাদ শিরোনামে দ্বিতীয় একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়—
প্রাচ্য ও দ্বৈতাদ্বৈতবাদ: সবসময় চেয়েছি এমন কাজ করতে যার পেছনে থাকবে আমার দেশের জল-মাটি-হওয়া এবং সেই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে আমাদের জটিল বর্তমান। চেয়েছি দেশীয় ঐতিহ্যের বিস্তার ও নিজস্ব আধুনিকতার অনুসন্ধান। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের পাঁচালী নাটক "প্রাচ্য ও তার শিল্পতত্ত্ব দ্বৈতাদ্বৈতবাদের অনুপ্রেরণায় আমার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার কলাকেন্দ্রে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত। এ কাজের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানকে ছুঁতে চেয়েছি আধুনিকের মন নিয়ে। আঙ্গিকে স্তর থেকে স্তরান্তরে উন্মোচন ঘটাতে চেয়েছি বাঙালি সত্তার সমকালীন ও চিরকালীন রূপের।
শৈশব শিল্প: শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে অত্যন্ত প্রাণচাঞ্চল্য ও উচ্ছলতার সঙ্গে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছি। ৯-১০ বছর বয়স থেকেই শিশু একাডেমি, চিলড্রেনস থিয়েটার, কিডস কালচারাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। জীবনে যখন যা ভালো লেগেছে, যা শিখতে ইচ্ছে হয়েছে, তা-ই শেখার চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। কৈশোরে মঞ্চনাটক ও কবিতা আবৃত্তিচর্চায় জড়িত ছিলাম। ২০০০ সালে"জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ স্বর্ণপদক অর্জন করি। ২০০২ সালে অংশগ্রহণ করি ভারতের মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভালে। এখনো সময় পেলে মঞ্চের পেছনে কাজ করি। বড় ভাই বেশ ভালো ছবি আঁকতেন। ছোটবেলায় ভাইয়ার কাছেই ছবি আঁকার হাতেখড়ি। ছবি আঁকার প্রতি চরম ভালো লাগা থেকেই এ বিষয়ে লেখাপড়া করার আগ্রহ জন্মে। ছাত্রাবস্থাতেই কার্ড, ক্যালেন্ডার, স্টেজ ডিজাইন, কনভোকেশন ইভেন্ট ইত্যাদিতে কাজ করেছি।
স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যম: যেহেতু আমি চিত্রকলার শিক্ষার্থী সেহেতু চিত্রকলার প্রত্যেকটি মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে, যেমন—পেন্সিল স্কেচ, চারকোল, অয়েল প্যাস্টেল, জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রিলিক, মিশ্র মাধ্যম ইত্যাদি। তেলরঙে কাজ করতে ভালো লাগলেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সেদিক থেকে অ্যাক্রিলিক ও মিক্সড মিডিয়ায় কাজ করাটা অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের। তবে বর্তমানে ইনস্টলেশন ও নিউমিডিয়া আর্ট নিয়ে ভাবছি।
প্রিয় শিল্পী ও কাজ: এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। দেশের শিল্পীদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরী, রশিদ চৌধুরী, আব্দুস শাকুর শাহ, ফরিদা জামান, ফারেহা জেবা, আতিয়া ইসলাম অ্যানি ও শিশির ভট্টাচার্য। আর দেশের বাইরের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের হেনরি মাতিস, স্পেনের সালভাদর দালি, পাবলো পিকাসো, মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলো ও জার্মানির জর্জ বেসেলিৎজ। এ শিল্পীদের আঁকার কনসেপ্ট, কম্পোজিশন, রঙের ব্যবহার ও পরিমিতিবোধ, বিষয়ের উপস্থাপন ও বৈচিত্র্য বেশ টানে আমাকে এবং কাজের ক্ষেত্রেও আগ্রহী করে তোলে। তবে কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ করে নয়, আমি নিজের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করতে ভালোবাসি।
কাজ-প্রদর্শনী-পুরস্কার: শিল্পের সঙ্গেই আমার বসবাস, শৈশব থেকে শিল্পের বিভিন্ন অঙ্গনে জড়িত থাকার কারণে বেশকিছু পুরস্কার রয়েছে ঝুলিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা ইনস্টিটিউটের "প্রথম বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী-২০১১তে চিত্রকলায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার"পাই"‘বেলুন কথা’ সিরিজ কাজে। বেশ কয়েকটি দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছি। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আমি যখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তখন ৩৮টি শিল্পকর্ম নিয়ে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে "‘শিশিরে পদচ্ছাপ’"শিরোনামে আমার কাজের প্রথম একক প্রদর্শনী হয়।