উৎসে কর ফাইনাল সেটলমেন্ট হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সমগ্র বাংলাদেশভিত্তিক সর্বপ্রকার শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার। তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ছাড়াও স্থানীয় সব শিল্পের সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে বিসিআই কাজ করে চলেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা ডলার সংকটের মধ্যে সরকারের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন-২০৩০, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পথপ্রদর্শক হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কাজ করবে বলে বিসিআই বিশ্বাস করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশের করপোরেট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে এবং আমরাও ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানাই। ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিল্প খাতের নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোর সমাধানের সুপারিশ পেশ করছি:

. গ্রস প্রফিট (জিপি) খাতভিত্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসংগত নয়। আবার জিপি কমে গেলে অথবা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেয়া হয় না। এমনকি আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না ধারণার সমাপ্তি টানা দরকার।

. ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

. আয়কর আইনের ৮২সি ধারা অনুসারে সর্বনিম্ন কর হিসেবে উৎসে কর কর্তন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আবার অ্যাসেসমেন্টে নেয়া হয়, আমরা উৎসে কর চূড়ান্ত কর দায় বা ফাইনাল সেটলমেন্ট হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।

. কর নিরূপণ সম্পন্ন হওয়ার পর আয়কর রিফান্ড সৃষ্টি হলে (ধারা-১৫০, বিধি-৩৬) ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও অগ্রিম আয়কর ফেরত পাওয়া যায় না, আমরা ওই ধারার আশু প্রয়োগের প্রস্তাব করছি।

. আয়কর আইনের ৩০ ধারা মোতাবেক অননুমোদিত খরচ অতিরিক্ত বোঝা বহন করে। ধারার ক্ষেত্রে বিজনেস প্রমোশনের খরচ, যেমন মার্কেটিং, এন্টারটেইনমেন্ট, স্যাম্পল, বিদেশ ভ্রমণ, এমপ্লয়ি পারকুইজিট, ইনসেনটিভ বোনাস, টেকনিক্যাল ফি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধারা ৩০ অনুযায়ী খরচের সীমা রহিত করে প্রকৃত খরচ হিসেবে আমলে নেয়ার প্রস্তাব করছি।

. সম্পদ অর্জনের (অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন না করা হলে তা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার [ধারা-১৯ (৩২) মোতাবেক] বিধান বাতিলের প্রস্তাব করছি।

বিসিআই মাইক্রো, কুটির ক্ষুদ্র শিল্প খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং তার ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪- বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ পেশ করছি

. তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে তহবিলের সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল বিতরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি।

. শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে থেকে শতাংশ উৎসে কর নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

. মাইক্রো, কুটির ক্ষুদ্র শিল্প খাতে সব ধরনের ইউটিলিটির ওপর ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ করছি।

. মাইক্রো, কুটির ক্ষুদ্র শিল্প এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছর কর অবকাশ প্রদান করা এবং পরবর্তী সময়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে কর নির্ধারণের সুপারিশ করছি।

. ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক যৌথ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করার প্রস্তাব করছি।

আয়কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবাবলি

. বাংলাদেশের করপোরেট করহার আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। করহার কোনো শর্ত ছাড়াই দশমিক শতাংশ হারে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। এতে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা উৎসাহিত হবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। করপোরেট করহার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।

. শিল্প ক্ষেত্রে মূসক কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। শিল্প খাত রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং আমদানি হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের অর্থনীতিতে অধিক ভূমিকা রাখে বিধায় তাদের প্রণোদনা প্রদান এবং ট্রেডিং কোম্পানির তুলনায় নিম্নহারে করপোরেট কর আরোপ করার প্রস্তাব করছি।

. সব রফতানি খাতে সমহারে উৎসে শূন্য দশমিক শতাংশ এবং আয়কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার সুপারিশ করছি।

. আমরা ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি (ভারতে লাখ রুপি) ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা বিদ্যমান আয়করের হার পুনর্নির্ধারণ।

মূল্যস্ফীতি জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী ২০২৩-২৪ কর বছরের জন্য বর্তমান ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা বিদ্যমান আয়করের হার পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

. কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সবাইকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করার প্রস্তাব করছি।

. প্রফেশনাল, টেকনিশিয়ান ট্রেইনারের ক্ষেত্রে যদি ইনস্টিটিউশন এমনকি ইন্ডাস্ট্রিও নিয়োগ দেয় তাদের মজুরি করমুক্ত রাখার সুপারিশ করছি।

. ডিভিডেন্ডের ওপর কর ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করছি।

. ইকো ফ্রেন্ডলি এনভায়রনমেন্ট এবং গ্রিন সার্টিফায়েড শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করছি।

মূল্য সংযোজন কর (মূসক)

. মূসক আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ের বার্ষিক টার্নওভারে ঊর্ধ্বসীমা কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য সরবরাহ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।  বিশেষত প্রকৃত মুনাফা অনেক কমেছে অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের।

. মূসক নিবন্ধিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার কমিয়ে থেকে শতাংশ সীমার মধ্যে মূল্য সংযোজন কর করার প্রস্তাব করছি।

. সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক মূসক কার্যক্রম কার্যকর করার সুপারিশ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন