আমদানিতে শুল্ক কমালে সাশ্রয়ী দামে এলপি গ্যাস পাবে গ্রাহক

মোহাম্মদ নুরুল আলম , চিফ অপারেটিং অফিসার, ফ্রেশ এলপিজি গ্যাস

বাজেট আসন্ন। এবারের বাজেটে এলপি গ্যাস খাতের অপারেটরদের কী প্রত্যাশা করছেন?

এলপিজি বাংলাদেশে বর্তমানে কুকিং ফুয়েল হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সামনে চাহিদা আরো বাড়বে। আমরা ব্যবসায়ীরা যারা আছি, তারা চেষ্টা করছি এলপি গ্যাসকে আরো জনপ্রিয় করার জন্য। সরকার আমাদের সঙ্গে যে প্রাইসিং পলিসিতে রয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। বাজেটে আমরা যেটি প্রতাশ্যা করছি, তা হলো বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে এলপিজিতে শতাংশ এটি এবং শতাংশ এআইটি দিয়ে থাকি। বিক্রি পর্যায়ে আমরা শতাংশ ভ্যাট দিই। এবারের বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা এটি এআইটি যেন সরকার উঠিয়ে দেয়। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সরকার ভ্যাট নিতে পারে, এতে আমাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু এটি এআইটি অ্যাড করলে এটা এলপি গ্যাসের দামের ওপর প্রভাব পড়ে। গ্রাহকের কিনতে খরচ বেশি পড়ে, কষ্ট হয় তাদের।

এলপি খাতের ব্যবসা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। সামনে বাজার আরো প্রসারিত হবে। খাতের ব্যবসা টেকসই স্থায়িত্বের জন্য বাজেটে বিশেষ কোনো প্রণোদনা প্রত্যাশা করেন কিনা?

ইন্দোনেশিয়া ভারতে এলপি গ্যাসের বিজনেসে ভর্তুকি দেয়া হয়। ভারতে গ্রাহক নির্দিষ্ট কিছু সিলিন্ডারে ভর্তুকি পেয়ে আসছে। আমাদের দেশে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। জনগণের দোরগোড়ায় এলপি গ্যাস পৌঁছে দিতে হলে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি পূরণ করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নয়টি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেয়। আধার কার্ডের বিপরীতে ভর্তুকি দেয়া হয় গ্রাহকদের। বাংলাদেশে এলপিজি খাত প্রসারে অপারেটরা সিলিন্ডারে ভর্তুকি দিয়ে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। খাতের ব্যবসা এখন ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাজার সম্প্রসারণে সরকারের আর্থিক কোনো সহযোগিতা নেই। সরকার নীতি পলিসি দিয়ে সহায়তা করেছে।

বিশেষভাবে একটি ১২ কেজি সিলিন্ডার তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর সাধারণত ২৫০০-২৮০০ টাকা লাগে, যা বাজার সম্প্রসার এবং ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে হাজার টাকায় বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাকি পুরো টাকাটিই কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন থেকে ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে আসছে। আসন্ন বাজেটে সরকার যদি সিলিন্ডার মূল্যে ভর্তুকি দিয়ে আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তাহলে এই খাতে আরো ব্যাপক প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশের মানুষ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি আরো সহজে ব্যবহার করতে পারবে।

ডলার সংকট দেশে প্রকট এখন। অন্যান্য খাতের মতো এলপিজি অপারেটররা ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছে না। খাতে এই সমস্যা এখন কতটা প্রকট?

এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা ব্যালান্স অব পেমেন্টে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছি। তবুও সরকার অনেকগুলো খাতে সহায়তা করছে। তার মধ্যে এলপিজি খাত একটি। এলপিজি আমদানিতে মুহূর্তে কোনো সমস্যা না হলেও এটা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা। ডেফার্ডের পরিবর্তে এলসিগুলো অ্যাট সাইট করতে পারলে ডলারের কারণে ডেফার্ডে যে লোকসান হচ্ছে, সেটি হতো না।

অটোগ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে, এটি জনপ্রিয়ও হচ্ছে। অটোগ্যাস নিয়ে অপারেটরদের পরিকল্পনা কী?

অটোগ্যাস জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি গাড়ির জন্য সাশ্রয়ী জ্বালানি। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সাশ্রয়ী বলতে ইকোনমিক্যালি সাশ্রয়ী। নন-গ্রিড এলাকায় যেখানে সিএনজি সুবিধা নেই, সেখানে আমরা অটোগ্যাস পৌঁছে দিচ্ছি। অকটেন পেট্রলের সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, সেখানে এলপিজিতে প্রায় ৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী হয়। নন-গ্রিড এরিয়াকে ফোকাস করে আমরা অটোগ্যাসের প্রসার ঘটিয়েছি। অটোগ্যাসে বাল্ক বিক্রয়ে শতাংশ ভ্যাট দিই সরকারকে। কিন্তু বটলিং পর্যায়ে বাল্ক বিক্রয়ে ভ্যাট ফ্রি। যদি এটা উঠিয়ে দেয়া যায় তাহলে অটোগ্যাসকে আরো দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারব। এটা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকাও রাখবে।

এলপিজি খাতে বেশ কয়েকটি বিদেশী কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। তারাও দ্রুত বাজারে আসবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কোম্পানিগুলো চ্যালেঞ্জে পড়বে কিনা?

এলপিজি খাতে বিদেশী কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করাকে আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি না। আসলে যত বিদেশী বিনিয়োগ আসবে তত বাংলাদেশে উন্নতি হবে। বরং বিদেশী কোম্পানি এসে এখানে বিনিয়োগ করলে তাদের কাছ থেকেও আমরা অভিজ্ঞতা নিতে পারি, শেয়ারও করতে পারি। বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে খাতে এসএইচ গ্যাস, আই গ্যাস এবং থাইল্যান্ডের একটা কোম্পানি লাফজস গ্যাসকে কিনে নিয়েছে। এলপিজি দেশের মোট জনসাধারণের প্রায় ২০ শতাংশ এলপি ন্যাচারাল গ্যাস ব্যবহার করে। এখনো ৮০ শতাংশ জনসাধারণ কাঠ-লাকড়ি দিয়ে রান্না করে। বরং তারা বিনিয়োগ করলে এলপিজি খাতের বাজার আরো প্রসারিত হবে।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মেঘনা এলপিজি নিরাপত্তার বিষয়টি কতটুকু গুরুত্ব দেয়।

সিলিন্ডারের দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন স্তরে তিনটি স্তরে মূলত কাজ করি। শুরুতে আমরা সিলিন্ডারের হাইড্রো টেস্ট করি। এরপর বাস্ট টেস্ট এবং লিক টেস্ট করে থাকি। এটা যখন রিফিল করা হয়, তখন সোপ টেস্ট করা হয়, লিক ডিটেকশন টেস্ট করি এবং গ্রাহক পর্যায়ে এটি আমরা তদারকি করি। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে কিনা সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অনেক দূর এগিয়েছে। দেশে ১১টি কোম্পানি সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। সবগুলো সিলিন্ডারই ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড মেনে করা হয়। সিলিন্ডার তৈরির ক্ষেত্রে মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ডট ফোরবিএ-২৪০ মেনে তৈরি করে। আর সিলিন্ডার দুর্ঘটনা রোধে গ্রাহকদের ব্যবহারবিধিতে আরো সচেতন হতে হবে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।

বিইআরসি মূল্যে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না অভিযোগ গ্রাহকের। এলপি গ্যাস কিনতে গেলে কোম্পানিভেদে দামে পার্থক্য থাকে অনেক বেশি। এই পার্থক্য কেন? এক দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?

বিইআরসির প্রাইস ফর্মুলাকে আমরা স্বাগত জানাই বরাবরই। তবে এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেসব কম্পোনেন্ট রয়েছে তার সবগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয় না। বিশেষত বিইআরসি ডলারের যে রেট ধরে এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে অপারেরটরা সেই দামে এলপিজি গ্যাসের এলসি পরিশোধ করতে পারে না। ফলে ব্যবসায়িক পলিসি অনুযায়ী, বিভিন্ন কোম্পানির এলপি গ্যাসের তারতম্য তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বাজারে তার পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি কোম্পানি, পরিবেশক আর খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে যে মুনাফা ধরে মূল্য নির্ধারণ করা হয় তা যথেষ্ট নয়। এলপিজি যেহেতু ভারী পণ্য এটার ট্রান্সপোর্টেশন, লোড-আনলোডিং, ডেলিভারিতে অনেক খরচ রয়েছে।  যে কারণে বাজারে তার পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। ফলে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর হলে আশা করি গ্রাহক বাজারে বিইআরসির ঘোষিত দামেই এলপিজি পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন