বিশ্বকাপ বাংলাদেশে খেলতে চায় পাকিস্তান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০১৬ সালের পর ভারতের মাটিতে খেলেনি পাকিস্তান ক্রিকেট দল ছবি: ক্রিকইনফো

চলতি বছর সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছয় জাতির এশিয়া কাপ ক্রিকেট। কিন্তু বৈরী রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে পাকিস্তানে গিয়ে আসরের ম্যাচগুলো খেলতে চায় না ভারত। সমাধান হিসেবে হাইব্রিড এশিয়া কাপ মডেল বের করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি), যার বর্তমান চেয়ারম্যান ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সেক্রেটারি জয় শাহ। মডেল অনুসারে, এশিয়া কাপ পাকিস্তানেই হবে এবং ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে নিরপেক্ষ কোনো দেশে। এসিসির মডেলই আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে চায় পাকিস্তান!

চলতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের মাটিতে বসছে ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর। বৈশ্বিক আসর যখন ঘনিয়ে আসছে তখন জোর আলোচনা পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে। ভারত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবে না বলে পাকিস্তানও তাদের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায়। অবশ্য নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে নাম উঠেছে শ্রীলংকারও। শেষ পর্যন্ত যে দেশকেই বেছে নেয়া হোক না কেন, এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেলের আলোকেই বিশ্বকাপের সমাধান খুঁজছে পাকিস্তান।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এখনো বিশ্বকাপের বিস্তারিত সূচি প্রকাশ করেনি। বিশ্বকাপ সুপার লিগ থেকে আট দলের অংশগ্রহণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্বাগতিক ভারতসহ লিগ থেকে আটটি দল সরাসরি উঠবে বিশ্বকাপে, আর দুটি দল আসবে বাছাইপর্ব খেলে। ১০ দলের বিশ্বকাপ আসরের ম্যাচগুলো হবে ভারতের ১০টি ভেন্যুতে। 

সম্প্রতি দুবাইয়ে আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে এশিয়া কাপে ভারতের অংশগ্রহণ আর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই আপৎকালীন সমাধান হিসেবে হাইব্রিড মডেলের কথা উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত একটি বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। পিসিবির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ভারত যদি বছর এশিয়া কাপের ম্যাচ পাকিস্তানে না খেলে তবে তার প্রভাব পড়বে ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও, যেটি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।  

জানা গেছে, পাকিস্তান-ভারত সংকট সমাধানে হাইব্রিড মডেলের সাহায্য নিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে এসিসি। জয় শাহ জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলবে না ভারত। তাই ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলতে চায় নিরপেক্ষ কোনো দেশে। সেটি হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, শ্রীলংকা কিংবা ইংল্যান্ডে। আর ভারত পাকিস্তান উভয় দেশ ফাইনালে উঠলেও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলা হবে।

এরপর পিসিবির দেয়া অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব হলো এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেল তাহলে বিশ্বকাপে তাদের জন্যও প্রয়োগ করা হোক। পাকিস্তান বলছে, এশিয়া কাপে ভারতের কী অবস্থান, সেটিই বিশ্বকাপে তাদের অবস্থানও নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। ভারতের কাছাকাছি অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ যোগ্য বিকল্প হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিশ্বকাপের লজিস্টিক সুবিধাদি পৌঁছানোও সহজ হবে।

পিসিবির এক সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, হ্যাঁ, ভারত যদি এশিয়া কাপে তাদের দল পাকিস্তানে খেলতে না পাঠায়, তবে আমরাও বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাব না। আমরা চাইব শ্রীলংকা কিংবা বাংলাদেশ আমাদের ম্যাচগুলো আয়োজন করুক। আমরা ভারতে খেলব না।

করোনার কারণে ২০২১ সালের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি, যে আসরটি গত বছর আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয় টি২০ ফরম্যাটে। এটির স্বত্ব শ্রীলংকার ছিল। ভারত পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের কারণে স্বত্ব বদল করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপও একই কারণে ভারত থেকে সরিয়ে আরব আমিরাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

২০১১ সালে ভারত শ্রীলংকার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। সেবার পাকিস্তানও ছিল অন্যতম আয়োজক। যদিও ওই সময় দেশটিতে বিদেশী কোনো দল খেলতে অনীহা প্রকাশ করায় স্বাগতিক হিসেবে তারা বাদ পড়ে। পাকিস্তানের ম্যাচগুলো বাকি তিন দেশ ভাগাভাগি করে নেয়। ওই আসরে শ্রীলংকাকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ১২ বছর পর আবার ভারতে বিশ্বকাপ। যদিও এবার সহ-আয়োজক হিসেবে অন্য কাউকে রাখা হয়নি। এর পরও পাকিস্তান যদি হাইব্রিড মডেলের দাবি  আদায় করতে পারে, তাহলে শেষ পর্যন্ত আয়োজক হিসেবে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশকেও।

তবে বাংলাদেশ কি বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনে প্রস্তুত? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন অবশ্য জানালেন, তারা বিষয়ে কিছুই জানেন না। এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা একেবারেই অবগত নই। নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাই হয়নি। বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত, সেটিও ভেবে দেখার আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন