রাজশাহীর সমাবেশে মির্জা ফখরুল

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সরকারের ঘুম হারাম

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজশাহী

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে গতকাল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ঢাকায় হতে যাওয়া বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সরকার ভয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে গতকাল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি বলেছেন, নয়াপল্টনে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। তারা নিজেরাই বলাবলি করছে, সেদিন নাকি তাদের তখতে তাজ (সিংহাসন-মুকুট) উল্টে যাবে। এখন নিজেদের ওপরই তাদের আস্থা নেই।

রাজধানীর সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিক কর্মসূচি শেষ হবে। ওইদিন তারা নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেদিন কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ তারিখে (ডিসেম্বর) বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। সেখানে বিএনপি বরাবর বিভাগীয়, জাতীয় অনেক সমাবেশ করেছে। লাখ লাখ মানুষ হয়েছে সেখানে। কোনোদিন কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে এখন কেন সমস্যার কথা আসছে? সরকার জঙ্গি আক্রমণের ধুয়া তুলেছে। নিজেরা বাস পুড়িয়ে, ককটেল মেরে বলেবিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করছে।

রাজশাহীতে বেলা ২টার দিকে মূল সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই বক্তব্য দেন স্থানীয় আঞ্চলিক নেতারা। সম্মেলনের প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব বক্তব্য দেন বিকালের দিকে। চোরের মন পুলিশ পুলিশ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু হলেই সরকার দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করে। বিএনপি আইলো, বিএনপি আইলো... কিন্তু বিএনপির যে আন্দোলন, তা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, কিংবা দলের নেতাদের মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, আন্দোলন ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আবারো নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারপর হবে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সংসদ গঠিত হবে। এখন যেসব দল আন্দোলনে আছে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের রুখে দিতে না পারলে সব অর্জন শেষ হয়ে যাবে। সরকারের পতন ঘটাতে হবে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ নয়জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধী দলকে নির্মূল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরো উত্তাল হয়ে জেগে উঠেছে। লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। লুটেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। ইসলামী ব্যাংক থেকে নয়টা গায়েবি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেয়া হয়েছে। দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়া আর সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে এরা। দানবীয় অনির্বাচিত সরকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিরোধী দলকে হামলা-মামলা, গুম-খুন দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মেতেছে। কিন্তু পারেনি। এখন তারা ভয়ে আছে। আজ আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এছাড়া আরো বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি সভাপতি এরশাদ আলী ঈশা।

এদিকে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ফ্লপ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে লিটন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নানা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। রাজশাহীর সাধারণ মানুষ বিএনপির সমাবেশকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি বলেন, ২৫ হাজারের মতো মানুষ হলেই মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আশপাশে রাস্তা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ লাগে সেটি পূর্ণ হতে। আমরা ড্রোনে তোলা ছবিতে দেখেছি, বিএনপির সমাবেশের মাঠটি ফাঁকা ফাঁকা। সরকার পতনের অগণতান্ত্রিক ঘোষণার সঙ্গে সাধারণ মানুষ যে থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। লিটন বলেন, বিএনপি রাজশাহীতে সেমিফাইনাল খেলার ঘোষণা দিয়ে এসেছিল। রাজশাহীকে কেন তারা সেমিফাইনাল খেলার জন্য পছন্দ করল সেটি আমারও প্রশ্ন। তারা হয়তো মনে করছেনরাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ইত্যাদি তাদের সেই আগের ঘাঁটিই রয়ে গিয়েছে; যেখানে তাদের প্রার্থীরা দাঁড়ালে মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেয়। কিন্তু তারা জানে না, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে রাজশাহীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী দিয়ে অনেক মিলিয়ন কিউসেক পানি বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে গিয়েছে। ওই পানি যাওয়ার সময় বিএনপি-জাতীয়তাবাদী যারা ছিল, তাদের অনেককে টেনে নিয়ে চলে গিয়েছে। এটি এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নয়। যদি তাই হতো তাহলে তাদের সমাবেশের মাঠের করুণ অবস্থা হতো না।

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে নগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আখতার জাহান, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, সহসভাপতি নাইমুল হুদা রানা, ডা. তবিবুর রহমান শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আহসানুল হক পিন্টু প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন