সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় আগুন

চার মাসেও ফুলগাজীর ইয়াছিনের সন্ধান মেলেনি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ফেনী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ফেনীর ফুলগাজীর ইয়াছিনের সন্ধান মেলেনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে লাইভ করতে করতেই হঠাৎ ভিডিও অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইয়াছিনের সেলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই ইয়াছিন নিখোঁজ। ইয়াছিন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে। তিনি কনটেইনার ডিপোর লরি চালক হিসেবে কাজ করতেন।

নিখোঁজ ইয়াছিনের পরিবার জানায়, গত জুন ঢাকার গুলশান এভিনিউ থেকে এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস লিমিটেডের কাপড় নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় পৌঁছান ইয়াছিন। রাতে বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে মালপত্র নিয়ে আবার রাতেই ঢাকা ফেরার কথা ছিল লরি চালক ইয়াছিনের। তাই দিনভর ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় ইয়াছিনের লরি মালপত্র লোড করার জন্য ডিপোর ভেতরে গুদামের সামনে সিরিয়ালে ছিল। ডিপোয় আগুন লাগলে সেই দৃশ্য ইয়াছিন ফেসবুকে লাইভ করে সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করেন।

ইয়াছিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ফেসবুকে ইয়াছিনের ভিডিও লাইভ দেখে তাকে কল দিই। তখন ইয়াছিন জানায়, ‘ভাই আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি দোয়া করিসএটি বলার কিছুক্ষণ পরপরই ইয়াছিনের সেলফোনে লাইভ অন্ধকার হয়ে যায়। লাইভ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কল দিয়েও আর পাওয়া যায়নি।

ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম জানান, ছেলের সেলফোন বন্ধ পেয়ে দ্রুত আমরা সিতাকুণ্ডের ডিপোয় যাই। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হতাহতদের মাঝে ইয়াছিনকে খুঁজি। নিহতের মরদেহগুলো বারবার দেখেছি। কিন্তু ইয়াছিনের সন্ধান মেলেনি। ছেলেকে জীবিত পাওয়া অথবা ছেলের মরদেহ শনাক্তের জন্য আমার ডিএনএ নমুনাও দিয়ে এসেছি। কখনো কখনো ছেলে হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পারলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছুটে যাই। নিহতদের মরদেহগুলো ঘুরেফিরে দেখি। তিনি জানান, রোববারও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছি। এখনো ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৪ জনের মরদেহ শনাক্তের জন্য রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে; ডিএনএ নমুনা অনুযায়ী আপনার ছেলের মরদেহ থাকলে সেলফোনে জানানো হবে।

বদিউল আলম আরো জানান, আমার চারা মেয়ে    তিন ছেলের মাঝে ইয়াসিন ছিল তৃতীয়। পারিবারিক সচ্ছলতার আশায় ১০ বছর আগে ইয়াসিন সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোয় গাড়ি চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রায় দুই বছর আগে থেকে ইয়াসিন পদোন্নতি পেয়ে বিএম কনটেইনার ডিপোর লরি চালক হয়।

উল্লেখ্য, গত জুন রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোয় আগুন লাগে। ১১টার দিকে পরপর বিস্ফোরণে চতুর্দিক কেঁপে ওঠে। রাত ৩টার দিকে আগুনের ভয়াবহতা শতাধিক কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন