সাতসতেরো

বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষার ধারা ও চাকরির বাজার

ড. মো. আব্দুল হামিদ

সচেতন অভিভাবকের কাছ থেকে প্রায়ই একটা প্রশ্ন পাই। এমনকি বহু স্টুডেন্টও দেখা করে ব্যাপারে পরামর্শ চায়। সেটা হলোকোন বিষয়েমেজরকরবে? বাংলাদেশের ব্যবসায় শিক্ষায় প্রধানত দুটি ধারা চালু আছে।

প্রথমত, ঢাকাসহ দেশের সাধারণ (এমনকি কিছু বিজ্ঞান প্রযুক্তি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ব্যবসায় অনুষদের অধীনে কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। ঢাকা রাজশাহীতে এর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে অন্যগুলোতেও অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ফাইন্যান্স পড়ানো হয়। বিভাগের নামে ভিন্নতা থাকলেও মূল কথা এগুলোই।

অন্যদিকে দেশের নবীন, বিশেষায়িত এবং প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি বিভাগের অধীনেব্যবসায় প্রশাসনপড়ানো হয়। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মডেল। তাদের অনুকরণে দেশের কিছু (যেমন রাজশাহী জাহাঙ্গীরনগর) বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যারা প্রথমেই কোনো বিভাগে ভর্তি হয় তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব একটা ভাবার সুযোগ থাকে না। কারণ তারা শুরুতেই বিশেষ এক বিভাগে ভর্তি হয়। অন্তত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম তাদের সেখানেই শেষ করতে হবে। পরে এমবিএ করার সময় চাইলে (যদি সুযোগ থাকে) অন্য বিষয়ে করতে পারে।

নিবন্ধে আমরা মূলত আলোচনা করব সমন্বিত পদ্ধতি নিয়ে। অর্থাৎ শুরুতে তারা বিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়। প্রথম দুই বছর জেনারেল, মাইনর কোর কোর্সগুলো পড়ে। তার পর থার্ড ইয়ারে (কোথাও আরো পরে) তাদের মেজর চয়েস করতে হয়। অর্থাৎ ব্যবসায় শিক্ষার যে শাখাগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে একটা বাছাই করতে হয়।

তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সাবজেক্ট অফার করা হয় না। বিশেষত বিভাগে যে বিষয়গুলোর শিক্ষক সংখ্যা পর্যাপ্ত থাকে সেগুলোই অফার করা হয়। শিক্ষার্থীদের তার মধ্য থেকে একটা বাছাই করতে হয়। শাবিপ্রবিতে বর্তমানে সিলেবাসে আটটি বিষয় থাকলেও সাধারণত বিবিএতে অফার করা হয় পাঁচটি। এমবিএতে ছয়টি।

এখন সেগুলোর মধ্যে কোনটা ভালো বা মন্দ তা নিয়ে স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা রকম কথাবার্তা চালু আছে। তর্ক-বিতর্ক হয়। আমি নিজে যেহেতু এক বিষয়ে অনার্স পড়া সেহেতু আমার কিছু বায়াসনেস থাকাটা অসম্ভব নয়। তার পরও চেষ্টা করছি সব বিষয়ে তুলনামূলক একটা ধারণা দিতে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে সাবজেক্টের ভালো-মন্দ মূলত নির্ভর করে চাকরি-বাকরির সুযোগ সুবিধার আঙ্গিকে। তা না হলে যে মেয়েটা রক্ত দেখলে ভয়ে জ্ঞান হারায় তাকেও মা-বাবা ডাক্তার বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগত না! তাই আলোচনার মূল ফোকাস থাকবে বর্তমান ভবিষ্যতে পেশাগত সুযোগ-সুবিধাগুলো কেমন তার আলোকে। সঙ্গে প্রচলিত কিছু মিথ নিয়েও কথা বলতে চেষ্টা করব।

প্রথমত অপশনগুলো জেনে নিই। বাংলাদেশে আদিকাল থেকে কমার্স পড়ানো মানেই ছিল অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট। একপর্যায়ে মার্কেটিং এবং ফাইন্যান্স পড়ানো শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাকাউন্টিং সাবজেক্টকে হালনাগাদ করে নাম রাখা হয়েছে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস। আর ম্যানেজমেন্টকে বলা হচ্ছে ডিপার্টমেন্ট অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ।

মার্কেটিং বিভাগ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং নামেই পরিচিত। অন্যদিকে ফাইন্যান্সের সঙ্গে প্রথমে ব্যাংকিং যুক্ত করা হয়েছিল। পরে বিভাগই আলাদা করা হয়েছে। কোথাও আবার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স যুক্ত করা হয়েছে।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং থেকে উদ্ভব হয়েছে হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম বিভাগের। অন্যদিকে ম্যানেজমেন্ট থেকে হয়েছে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ডিপার্টমেন্ট অব অর্গানাইজেশন স্টাডিজ অ্যান্ড লিডারশিপ।

যা হোক, বিষয়গুলো বোধহয় বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে। সহজ করে বললে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগগুলো অফার করে অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স, এইচআরএম, এমআইএস। কোথাওবা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। তাই এগুলোর আলোকেই আলোচনা এগোবে। সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য অপশনগুলো নিয়েও কথা বলা যাবে।

প্রথমেই বলে রাখি, বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি চাকরিতে (বিশেষায়িত ক্ষেত্র ছাড়া) একজন গ্র্যাজুয়েট আবেদন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছাড়া মাস্টার্স বা উচ্চতর ডিগ্রি থাকা জরুরি নয়। সেখানে লিখিত মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন গ্র্যাজুয়েট সরকারি চাকরি লাভের যোগ্য বলে গণ্য হয়।

তাই বিজনেস স্টাডিজ ফেকাল্টির সব শিক্ষার্থী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমান অধিকার পায়। ফলে যাদের লক্ষ্য বিসিএস, বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্যান্য সরকারি ব্যাংকে জব করা তারা যে বিষয়টা পড়তে সত্যিই পছন্দ করে (বা খুব ভালো লাগে) সেটাই পড়া উচিত। কারণ ওই চাকরিগুলোয় আমার জানা মতে, বিশেষ কোনো সাবজেক্ট পড়ার কারণে অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। লিখিত মৌখিক পরীক্ষার পারফরম্যান্স সেখানে গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় কথা হলো, বেসরকারি কিছু ব্যাংক ছাড়াও বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কিছু সাবজেক্ট উল্লেখ করে দেয়। সেখানেও সব বিবিএ ডিগ্রিধারীকে এক কাতারে ফেলা হয়। সঙ্গে হয়তো তাদের কাজের বিশেষত্বের দিকে খেয়াল রেখে অর্থনীতি, ইংরেজি, পরিসংখ্যান বা নৃ-বিজ্ঞানের কথা উল্লেখ করে। তবে সেটা খুব বেশি প্রতিষ্ঠান নয়।

এবার আসি বিশেষায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে চাকরির সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে :

ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং

দেশে বিবিএ পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পেছনে দুটি কারণ কাজ করতে পারে। প্রথমত, এইচএসসি পর্যন্ত যারা সায়েন্স পড়ে তারা মনে করে ম্যাথমেটিক্যাল বিষয় থাকায় তারা ভালো করবে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি ব্যাংক সংস্কৃতিতে অনেকেই মনে করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ডেস্ক জব করা তাদের জন্য ভালো হবে। তাছাড়া বেতন-বোনাসও আকর্ষণীয়। বিশেষত মেয়েদের বিষয় পড়ার প্রধান মোটিভেশন থাকে পরিপাটি পরিবেশে চাকরি করার আগ্রহ।

তবে আমাকে যারা জিজ্ঞাসা করে তাদের খুব সতর্ক করে দেই দুটি বিষয়। তাহলো ব্যাংকের জব বাইরে থেকে যতটা আরামদায়ক মনে হয়, বাস্তবে সেটা নয়। সরকারি বা বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই কথা প্রযোজ্য। সরকারিতে জব সিকিউরিটি থাকে কিন্তু কোনো ধরনের ফাঁকি, অবহেলা, ঐচ্ছিক ছুটির সুযোগ নেই বললেই চলে।

পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকে নানা রকম টার্গেট দেয়া হয়, যা সারা দিন ডেস্ক জব করে আবার সাপ্তাহিক বা মাসিক টার্গেট পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে তাদের প্রচুর শারীরিক মানসিক চাপ নিতে হয়।

তবে হ্যাঁ, যদি তারা বিষয়টা সত্যিই ভালো বুঝে থাকে, উপভোগ করে। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাংকে জব করার পর নানা দিকে সুইচ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও, উন্নয়ন সংস্থা, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ইত্যাদি। আরো ভালো করলে এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বা বিদেশী ব্যাংকে কাজ করার সুযোগ মেলে।

তবে ফাইন্যান্স নিয়ে পড়ালেখায় অমনোযোগী থাকলে রেজাল্ট খারাপ হবে। আর খারাপ রেজাল্ট দুর্বল ভিত্তি নিয়ে পেশাগত জীবনে ভালো করা বেশ কঠিন। শুধু ফাইন্যান্স পড়ার কারণে কেউ আদর করে পাশে বসাবে না, চাকরি দেবে না। তাই কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে এবং বেসিক ভালো থাকলে ফাইন্যান্স নেয়া যেতেই পারে।

অ্যাকাউন্টিং

আমি যখন ক্লাস নাইনে হিসাববিজ্ঞান কারবার পদ্ধতি পড়া শুরু করি (১৯৯২ সালে) তখন বিষয়টি পুরোই ছিল ম্যানুয়াল। অর্থাৎ লাখ লাখ টাকার হিসাব মেলাতে হতো কাগজে-কলমে হিসাব করে। এমনকি আমি যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিই তখন ১০-১৫ লাখ টাকার হিসাব পয়সাসহ মিলিয়ে দিতে পারতাম।

আমি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা পছন্দ করতাম না। কারণ তাতে যন্ত্রের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। তাছাড়া মাঝেমধ্যেই ঘোষণা করা হতো, পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। তাই নিজের মতো করে সেগুলোর সমাধান করতাম। তখন ব্যাংকগুলোয় সব কাজ ম্যানুয়ালি হতো। বিশাল বড় বড় লেজার বই মেইনটেইন করা হতো। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই বৃত্তির টাকার জন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছিল। তখন দেখতাম চেক দিলে একজন কর্মী সংশ্লিষ্ট লেজার বই খুঁজে বের করে আমার হিসাবে টাকা মাইনাস করে তবে চেকে স্বাক্ষর দিতেন। তখন ক্যাশিয়ার টাকা দিত।

এমনকি ২০০৪ সালে আমি যখন শাবিপ্রবিতে প্রভাষক পদে যোগদান করি তখনো সরকারি ব্যাংকগুলোর কাজকর্ম ম্যানুয়াল ছিল। শুধু ম্যানেজার সাহেবের পাশে একটা কম্পিউটার থাকত। তবে তার খুব একটা ব্যবহার দেখতাম না! প্রায় সময় সেটা মোটা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকত!

এখন দিন এতটাই বদলে গেছে, ক্ষণিকের জন্য নেট কানেকশন না থাকলে বহু ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটানা কয়েকদিন পর্যন্ত তারা ব্যাংকিং সেবা দিতে পারে না। এইকথা বলছি কী জন্য?

শুধু এটা বোঝানোর জন্য, হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম এখন অধিকাংশ কম্পিউটারভিত্তিক হয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যেই নিত্যনতুন সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। তাদের কাজকে আরো গতিশীল করছে। ফলে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর সুযোগ কমছে, বরং নতুন সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার শিখতে অনেক বেশি প্রশিক্ষণ উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে। আগের যুগের একজন হিসাবরক্ষক আর এখনকার দিনের ব্যাপক পার্থক্য হচ্ছে।

এবার আসি কাজের সুযোগের কথায়। আগেই বলেছি বিবিএ ডিগ্রি থাকলেই সুযোগ মিলবে প্রায় সব চাকরিতে আবেদন করার। লিখিত পরীক্ষায় না টিকলে কেউ অ্যাকাউন্টিং পড়ার কারণে বিশেষ সুবিধা দেবে না। তবে হ্যাঁ, বিষয়ের কর্মক্ষেত্র ফাইন্যান্সের চেয়ে একটু বেশি বিস্তৃত। কারণ সরকারি কলেজগুলোয় হিসাববিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে অনার্স মাস্টার্স পড়ানো হয়। ফলে বিসিএসের মাধ্যমে সেখানে প্রভাষক হওয়ার সুযোগ তুলনামূলক বেশি।

এছাড়া কেউ কেউ বিবিএ শেষ করে সিএ (চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি) পড়তে যায়। সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় সিএর সংখ্যা একেবারেই কম। তাই যদি কেউ সেটা সম্পন্ন করতে পারে নিঃসন্দেহে তার জন্য বিপুল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। এছাড়া আজকাল এসিসিএর মতো আন্তর্জাতিক কিছু প্রোগ্রামে নিজেদের এনরোল করে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছে।

মার্কেটিং

প্রায় সব মানুষের ধারণা মার্কেটিংয়ের জব মানেই হলো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে পণ্য বিক্রি করা। এমন ধারণা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণমার্কেটিংশব্দের ব্যাপক ব্যবহার। এমনকি মানুষ শপিং করতে যাওয়ার সময়ও বলে মার্কেটিংয়ে যাচ্ছি! অথচ মার্কেটিং করার কথা প্রতিষ্ঠানের, ক্রেতার নয়।

যা হোক, মার্কেটিংয়ের কাজ এখনো (আমাদের দেশে) মূলত পণ্য বিক্রয়কেন্দ্রিক। তবে বহুজাতিক দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোয় মার্কেটিং সেলস ডিপার্টমেন্ট আলাদাভাবে কাজ করে। এক কথায় বললে, মার্কেটিংয়ের কাজ হলো পণ্যটিকে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। আর সেলসের কাজ যারা সত্যিই সেটা কিনতে চায় তাদের হাতে তুলে দেয়া। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিজে কাজ করে না, বরং ডিস্ট্রিবিউটরের সাহায্য নেয়।

-সংক্রান্ত আরেকটি ভুল ধারণা হলো দুর্বল ছাত্ররা মার্কেটিং পড়ে। কারণ সেখানে ম্যাথমেটিক্যাল বিষয় কম। এক্ষেত্রে আমি বলি দুনিয়ায় সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো মানুষের পকেট থেকে নগদ টাকা বের করা। এখন সে কাজটি কোনো কোম্পানি কি দুর্বল মেধার কোনো লোককে দিতে চাইবে? বরং প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মেধাবী, দক্ষ স্মার্ট ব্যক্তিটিকে দায়িত্ব দেয়া উচিত।

কারণ মার্কেটার কাজ করে কাস্টমারের সাইকোলজি নিয়ে। পাশাপাশি আজকের দিনে ডাটা অ্যানালিটিকস বিষয়ে ভালো জ্ঞান না থাকলে বড় প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং টিমে চান্স পাওয়া সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে মার্কেটিং টিমে কাজ করা লোকদের ডাটা সায়েন্টিস্ট বানাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে নানা প্রোগ্রাম কোর্স করাচ্ছে।

যা হোক, আমি নিজে মার্কেটিংয়ের লোক হওয়ায় বোধ হয় একটু বেশি বলে ফেললাম। এখন বলি চাকরি-বাকরির অবস্থা। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে মোট কর্মীর বেশির ভাগ লোক মার্কেটিংয়ের কাজে জড়িত থাকে। অর্থাৎ তাদের দ্রব্য বা সেবা টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছানো গ্রহণযোগ্য করার জন্য বেশিসংখ্যক মানুষকে নিয়োগ করে।

যেমন বড় একটা কনজ্যুমার গুডস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে যদি ফাইন্যান্সের দশজন কর্মী থাকে, অ্যাকাউন্টিংয়ের ১৫ জন থাকে। তবে সে প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজে থাকে শতাধিক ব্যক্তি। এমনকি সংখ্যা প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হাজারের বেশিও হতে পারে।  

তাই চাকরির সংখ্যার দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জব হয় মার্কেটিং সেক্টরে। কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত চালায় মার্কেটিংয়ের লোকেরা। তবে এন্ট্রি লেভেল কোনটা হবে তা নির্ভর করছে ক্যান্ডিডেটের যোগ্যতার ওপর। আমি ছাত্রদের প্রায়ই বলি, মার্কেটিং পড়ে তুমি অবশ্যই চাকরি পাবে। তবে তোমার শুরুর বেতন ১০ হাজার হবে না লাখ, তা নির্ভর করছে তোমার যোগ্যতা দক্ষতার ওপর।

এর পাশাপাশি অন্য সব চাকরিতে আবেদন করা যাবে। এছাড়া সম্প্রতি সরকারি কলেজগুলোয় মার্কেটিং পড়ানো শুরু হয়েছে। ফলে বিসিএসের মাধ্যমে সেখানে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ বাড়ছে। এরই মধ্যে আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন ছাত্র যোগদান করেছে। [চলবে]

 

. মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষা স্বপ্ন ক্যারিয়ারবইয়ের লেখক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন