নর্থ সাউথের পুনর্গঠিত বিওটির প্রথম সভা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার কর্তৃক পুনর্গঠিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) প্রথম সভা ডাকা হয়েছে। জানা গিয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে দেশের বাইরে অবস্থানরত কয়েকজন সদস্য সভায় অনলাইনে যুক্ত হবেন বলে জানা গিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, সদস্যদের পরিচয় প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার জন্যই সভা আহ্বান করা হয়েছে। আজকের সভায় তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নেই। তবে সপ্তাহেই বিওটির আরো একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিওটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। আর এজিএমেই নির্বাচন করা হবে পুনর্গঠিত বিওটির নতুন নেতৃত্ব।

আইন অনুযায়ী কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংশ্লিষ্ট বিওটিতে পদাধিকারবলেই সদস্য হিসেবে থাকেন। তবে এনএসইউর দায়িত্বরত উপাচার্যকে শিক্ষাবিদ হিসেবে পুনর্গঠিত বিওটির সদস্য করা হয়েছে। নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাতে। কেউ কেউ বলছেন, উপাচার্য যেহেতু বেতনভুক্ত কর্মকর্তা, তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিকভাবে সুবিধাভোগী। ট্রাস্টিরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে পারেন না, তাই উপাচার্যের ট্রাস্টি হওয়া কতটুকু যৌক্তিক?

তবে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আচার্যের। আচার্যের নির্দেশনা অনুমোদনের আলোকে অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে আচার্যের নির্দেশনা অনুমোদনের আলোকে তাকে শিক্ষাবিদ হিসেবে বিওটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলেই আচার্য এর অনুমোদন করেছেন।

উপাচার্যের ট্রাস্টি পদে নিয়োগ বিষয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেনও। গতকাল বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাই। বিষয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি না।

আগের ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ আমলে নিয়ে গত মঙ্গলবার এনএসইউর নতুন একটি বোর্ড গঠন করে দেয় সরকার। এতে আগের বোর্ডের বেশ কয়েকজন সদস্যকে বাদ দেয়া হয়। নতুন বোর্ডে মোট সদস্য রয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট . জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইউনাইটেড ফসফরাস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য . আতিকুল ইসলাম, জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজ জামিল শীমা আহমেদ। এর মধ্যে অধ্যাপক . আতিকুল ইসলাম, জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজ জামিল শীমা আহমেদ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন করে বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন। বাকি আটজন আগে থেকেই বোর্ডে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

এনএসইউর প্রতিষ্ঠাকালীন বিভিন্ন নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন বিশিষ্ট আমলা কূটনীতিক অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন আহমদ। তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য প্রেসিডেন্ট। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে কিংবা ওয়েবসাইটে মুসলেহ উদ্দিন বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্যই উল্লেখ নেই। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে তত্কালীন ফাউন্ডেশন সদস্যদের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে একপর্যায়ে তাকে নর্থ সাউথ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তিনি তার লেখা একটি বইয়ে বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগও তুলে ধরেন।

তবে সম্প্রতি বোর্ড পুনর্গঠনের সময় অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হওয়া চার সদস্যের মধ্যে তিনজনই মুসলেহ উদ্দিন আহমেদের পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে জাভেদ মুনির আহমেদ তার ছেলে, শীমা আহমেদ তার মেয়ে ফাইজ জামিল সম্পর্কে তার শ্যালক। এছাড়া বোর্ডে আগে থেকে সদস্য হিসেবে থাকা . জুনাইদ কামাল আহমেদও তার ছেলে। সে হিসেবে এনএসইউর বিওটি সদস্যের এক-তৃতীয়াংশই এখন মুসলেহ উদ্দিন আহমদের পরিবারের।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, জাভেদ মুনির আহমেদ ফাইজ জামিল আগেও প্রতিষ্ঠাকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ডে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের বাদ দেয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক . দিল আফরোজা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ট্রাস্ট খুলে যারা ব্যবসা করতে চান বা চেয়েছেন, তাদের জন্য কড়া বার্তা রয়েছে। অনিয়ম করে কোনো পার পাওয়া যাবে না। আর শিক্ষাবিদ যুক্ত করার বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ আইনেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা হওয়া কিংবা পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ শিক্ষানুরাগীদের উপস্থিতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন