নওগাঁয় মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ না করেই হস্তান্তর

আরমান হোসেন রুমন, নওগাঁ

নওগাঁর বদলগাছীতে নির্মাণাধীন মুজিব বর্ষের ঘর ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নওগাঁর বদলগাছীতে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ- প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন গৃহহীন ৩০ পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণ না করেই উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর দেখানো হয়েছে। ঘর নির্মাণ না করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন দেখিয়ে তথ্য পাঠিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ইউএনও স্বেচ্ছাচারিতায় এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

জানা যায়, আশ্রয়ণ- প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে নওগাঁ জেলায় ৭৩৭টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। যেখানে গত ২৬ এপ্রিল ৫৪০টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এরপর ২১ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সারা দেশে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন নওগাঁ জেলার আটটি উপজেলায় বাকি ১৯৭টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের মাঝে কবুলিয়ত নামজারি সম্পন্ন দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়। যেখানে বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের আবাদপুর গ্রামে ৩০টি গৃহনির্মাণ না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে কবুলিয়ত নামজারি সম্পন্ন দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জুন বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা বন্দোবস্ত কমিটির মাসিক কার্যবিবরণী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে লিখিত রেজল্যুশনে ৩০টি গৃহ নির্মাণকাজ সম্পন্ন এবং ঘর হস্তান্তরে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কমিটির অন্য সদস্যদের একমত পোষণ করার বিষয়টি লেখা হয়েছে। যেটি পরবর্তী সময়ে সরকারের আশ্রয়ণ- প্রকল্প শাখায় পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউএনও গত ২৭ জুন গৃহ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে রেজল্যুশন তৈরি করলেও আবাদপুর গ্রামের ৩০টি গৃহ নির্মাণকাজের ভিত খনন শুরু করা হয় ১৬ জুলাই। যেখানে লাখ ৫৯ হাজার টাকায় প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদাভাবে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমন স্পেস একটি বারান্দা সংযুক্ত ঘর নির্মাণকাজ এখনো চলমান। কচ্ছপ গতিতে সেখানে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। যেখানে নম্বর ইট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও গৃহ নির্মাণস্থলে নিম্নমানের ইট ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকারভোগীরা বলেন, গত ২১ জুলাই ইউএনও আমাদের শুধু জমির দলিলের ফটোকপি দিয়েছেন। কবে নাগাদ ঘর নির্মাণকাজ শেষ হবে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে নির্মাণকাজ শেষ হলে দ্রুত ঘরগুলো আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সারা দেশে সবাই ঘর নির্মাণের পর দলিল পাচ্ছে, আর আমাদের ঘর না দিয়ে আগে দলিল দেয়া হয়েছে। সময়মতো কাজ শুরু করলে হয়তো ঘর আরো আগেই আমরা পেতাম। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান তারা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইনুল ইসলামের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, ঘরগুলোর নির্মাণকাজ দেরিতে শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলমান।

বদলগাছী ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনবণিক বার্তাকে বলেন, আবাদপুর গ্রামে ৩০টি গৃহ নির্মাণকাজ চলমান। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধনের দিন উপকারভোগীদের মাঝে শুধু কবুলিয়ত নামজারি সম্পন্ন দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে এমন কোনো নীতিমালা নেই যে ঘর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই বন্দোবস্ত দিতে হবে। দখল পরে দিলেও হয়। এজন্য আমরা ওইদিন বন্দোবস্ত দিয়েছিলাম।

রেজল্যুশনে গৃহ নির্মাণকাজ সম্পন্ন দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভুল তথ্য পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজল্যুশন ফাইল থেকে চুরি করে বা অন্যভাবে সংগ্রহ করে দেখাটা মোটেও কাম্য নয়। কমিটির বাইরের কেউ এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করে আমার কাছে সঠিক উপায়ে নিতে পারত। রেজল্যুশনের ভাষায় যদি কিছু সংশোধন করার থাকে বিষয়টি আমি দেখব।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ঘর নির্মাণ সম্পন্ন দেখিয়ে হস্তান্তরের প্রস্তুতির ইচ্ছেমতো একটি রেজল্যুশন তৈরি করে ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। রেজল্যুশনে কী লেখা হয়েছিল, বিষয়ে আমরা কেউই জানতাম না। প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইউএনও স্বেচ্ছাচারিতায় এমনটি করেছেন। তার এসব খামখেয়ালিপনা কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের জনপ্রতিনিধিদের ওপরই ক্ষিপ্ত হন তিনি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন