সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের আভাস মিলছে কুমিল্লায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা থেকে

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। গতকাল দুপুরে নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন আওয়ামী লীগের নেতা। স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমরানের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে আসন্ন কুসিক নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে উঠেছেএমন আভাস মিলছে।

কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে ইমরান ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো। ইমরানের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরফানুল হক রিফাত লাভবান হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিফাত দুজনই কুমিল্লা- আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীসহ বাকিরা রাজনীতিতে তেমন পরিচিত নন। তাই ইমরানের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে এবারের কুসিক নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না।

গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। তিনি বলেন, কুমিল্লার মানুষ একটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জিম্মিদশা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এমপির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ভোটের মাঠে সাক্কু-রিফাতের লড়াই হবে পাতানো। কিন্তু দীর্ঘদিনের নাগরিক ভোগান্তি থেকে মানুষকে নিস্তার দেয়ার সুযোগ এবারো হলো না।

জানা যায়, কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজল খান কুমিল্লা- আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহার। আফজল খানের মৃত্যুর পর বাহাউদ্দিন বাহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আফজল খানের মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবং ছেলে আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।

আফজল খান বাহাউদ্দিন বাহারের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের মধ্যেই কুসিকের গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী ছিল আফজল খানের। ওই দুই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফজল খান নিজে এবং পরে তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। দুজনই পরাজিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে। ২০১২ সালে কুসিকের প্রথম নির্বাচনে আফজল খান ১৯ হাজার ১০৬ এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ১১ হাজার ৮৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। দুটি নির্বাচনেই বাহাউদ্দিন বাহার মনিরুল হক সাক্কুকে সমর্থন দিয়েছিলেনএমন অভিযোগ ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বেলায় এবার হয়েছে ঠিক এর উল্টো। এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থনপুষ্ট আরফানুল হক রিফাত। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। কিন্তু ইমরানের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা ক্ষীণ হয়ে গেল।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে আগে থেকেই বলে আসছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরান নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পরই মত পাল্টান তিনি। এতে বিস্মিত হন অনেকেই। মত পাল্টে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি নির্বাচন করব না বলেছিলাম ঠিক, কিন্তু এখন সরকার আমাকে সহযোগিতা করছে, এমপি সাহেব আমার পাশে আছেন, প্রকল্প পাস হচ্ছে, জনগণও আমাকে চাইছেন; তাই নির্বাচন করছি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা জেলা সভাপতি আলী হাসান টিটো বণিক বার্তাকে বলেন, এবারের কুসিক নির্বাচন নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সার্বিক চেষ্টা থাকবে তাদের। একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও অন্যরা নির্বাচন জমিয়ে তুলবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন