পিকে হালদারের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মিলল ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর্থিক খাতের আলোচিত চরিত্র প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী সুকুমার মৃধার বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে ভারতে। ভারতের অর্থসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) চালানো এক অভিযানে এসব সম্পত্তির খোঁজ মেলে। গতকাল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০টি জায়গায় ইডির অভিযান চালানো হয় বলে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

ইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও অভিযান পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার শিবশংকর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, পিএএনের মতো সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নাগরিকত্ব নেন তিনি। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি তার সহযোগীরা ভারতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছে বলে ইডি নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া কলকাতার পোশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তারা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছে বলেও নিশ্চিত হয়েছে।

এক সময় আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন প্রশান্ত কুমার হালদার। সে সময় দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। আবার এসব সম্পদের একটি অংশ বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অনেক মামলা হয়েছে। পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করছে দুদক। এরই মধ্যে ভারতে তার এসব সম্পত্তির খোঁজ মিলল।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা। তবে নিজেকে পিকে হালদারের সহযোগী নয়, ক্লায়েন্ট বলে পরিচয় দিতেন সুকুমার। আর্থিক দুর্নীতির খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উঠে আসে তার প্রকৃত পরিচয়। অশোকনগরের এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন পিকে হালদার সুকুমার মৃধা। গতকাল সেখানকার তিনটি বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হাওলাদারকে আটক করেন ইডির কর্মকর্তারা। এলাকায় দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী হিসেবে রয়েছেন পিকে হালদার সুকুমার। দুজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশেই বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব টাকা দিয়েই বিপুল সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে ধারণা ইডির।

অশোকনগরের ভারতী ক্লাব এলাকার পাশেই নবজীবন পল্লীতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি রয়েছে প্রশান্ত কুমার হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের নামে। অন্য একটি বাড়ি পিকে হালদারের ভাই প্রীতিশ সুকুমার হালদারের নামে কেনা। সেখান থেকেই আটক করা হয়েছে সঞ্জীব হাওলাদারকে। তবে তিন বছর আগে সুকুমার মৃধার কাছে প্রীতিশ বাড়িটি হস্তান্তর করার পর সেখানে সঞ্জীব বাস করতেন। সঞ্জীবও বাংলাদেশী নাগরিক বলে জানা গেছে।

গতকাল সুকুমার মৃধার বাড়ি ছাড়াও তাদের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চালায় ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র পিকে হালদারের অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। এদিন তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া যায়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকেও আটক করে ইডি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে পিকে হালদার এবং মৃধার বিনিয়োগ রয়েছে বলে ধারণা করছে ইডি। তাই প্রণব হালদার সুকুমার মৃধার জামাতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই সম্পত্তির খোঁজ করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা।

পিকে হালদার অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে, বিশেষ করে কানাডায় পাচার করেছেন। বর্তমানে নিজেও বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে ঢাকায় তার নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানও। ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, তাদের মধ্যে পিকে হালদার ছিলেন একজন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ২০২০ সালের ১০ আগস্ট হাজির হতে নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। ২০১৯ সালের অক্টোবর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন।

দুদক সূত্রে জানা গিয়েছে, পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাতের সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক। প্রায় হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে এখন পর্যন্ত ৬৪ জনকে আসামি অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ১৩ জনকে গ্রেফতার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারাও বিষয়টি গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছেন বলে জানান। বিষয়ে তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই বলে জানানো হয়।

পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গত বুধবার দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের জানান, এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ চাহিদা করা নথিপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন