দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
ডিএসইর যে ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন এক্সচেঞ্জটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সামিউল ইসলাম ও মো. আসাদুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. শফিকুর রহমান ও মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং সিনিয়র ম্যানেজার মো. রনি ইসলাম ও মো. পাঠান।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশনের কাছে কোনো অভিযোগ এলে সেটি তদন্ত করে প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। ডিএসইর ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১০ এপ্রিল বিএসইসির কাছে ডিএসইর এ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার একটি অভিযোগপত্র আসে। এতে ডিএসইর জিএম মো. সামিউল ইসলামের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়, তিনি তার বাসার কাজের বুয়ার নামে বেনিফিশারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে শেয়ার ব্যবসার পাশাপাশি ডিএসইর নিকুঞ্জের ভবন নির্মাণকালীন রড চুরি করে সে টাকা তার স্ত্রীর নামে উত্তরায় ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। সাভারে তিনি একটি বেভারেজ কোম্পানি স্থাপন করেছেন। ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের অর্ধেক শেয়ারও তার নামে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ডিএসইর জিএম মো. আসাদুর রহমানের বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি জিএম হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যদের বেতন না বাড়িয়ে নিজের বেতন দ্বিগুণ করে নিয়েছেন।
ডিএসইর জিএম মো. সামিউল ইসলাম ও মো. আসাদুর রহমানের অপকর্মের বিষয়ে যাতে সংবাদ প্রকাশিত না হয় সেজন্য আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করা হয়েছে এক্সচেঞ্জটির ডিজিএম মো. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।
ডিএসইর ডিজিএম মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি লিস্টিং বিভাগে থাকাকালীন রহিমা ফুড নিয়ে জালিয়াতির কারণে তার চাকরি চলে যাওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অপশক্তি তাকে লিস্টিং বিভাগ থেকে মনিটরিং বিভাগে বদলি করে দেয়। তিনি এ বিভাগে আসার পর প্রভাবশালী সদস্যদের ব্রোকারেজ হাউজগুলো নামমাত্র পরিদর্শন করা হতো। হাউজের নেগেটিভ ব্যালান্স থাকলেও তা পজিটিভ করে বিএসইসিতে পাঠানো হতো।
সিনিয়র ম্যানেজার মো. রনি ইসলামের বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি মেম্বারশিপ বিভাগে থাকা অবস্থায় হাউজে তার একটি ওয়ার্কস্টেশন ছিল এবং হাউজ বিক্রি ও অনুমোদিত প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন করতেন। ডিএসইর সিনিয়র ম্যানেজার মো. পাঠান হিসাব বিভাগে থাকার সময় এফডিআর ও ডিপোজিট চেকের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগের বিষয়ে অবহিত না হওয়ার কারণে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) বণিক বার্তাকে বলেন, দুজন জিএম পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এক্ষেত্রে তদন্ত করতে হলে জিএম কিংবা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে। বর্তমানে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি আগামী সপ্তাহে অফিসে যোগ দেয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।