ছয় বছরে দ্বিগুণ

আইন ভেঙে পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ওয়াসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন অনুযায়ী প্রতি বছর শতাংশ পানির দাম সমন্বয় করতে পারে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু এবার আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রাজধানীতে সরবরাহ করা পানির দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এর কারণ হিসেবে সরকারের ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত দাম বাস্তবায়ন হলে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে ঢাকার পানির দাম হবে দ্বিগুণ।

এর আগে, গত বছরের ২৫ মে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম শতাংশ বাড়িয়েছিল। সেই সময় আবাসিক গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করা প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা হয়। আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা করা হয়।

এর আগে ২০১৭ সালে আবাসিক পানির দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা বাণিজ্যিক ইউনিটের দাম ছিল ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর ২০১৮ সালের জুলাইয়ে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ২০২০ সালের এপ্রিলে পানির দাম বাড়ায় ঢাকা ওয়াসা। এরই ধারাবাহিকতায় সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। গত সোমবার ঢাকা ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভায় দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঢাকা ওয়াসার ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড রয়েছে। এতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুজন অতিরিক্ত সচিব, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদস্য হিসেবে থাকেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বোর্ড সভায় তোলা হয়েছিল। তখন বেশির ভাগ সদস্য এর বিরোধিতা করেন। একইভাবে সোমবার আবারো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। ওয়াসা বোর্ডে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম খান পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। তবে বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে এখনো সায় দেননি। তারা বলছেন, হঠাৎ করে দাম বাড়ালে মানুষের জীবনমানের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ফলে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বিষয়ে জানতে চাইলে তাকসিম খান বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা। সেই পানি আবাসিক গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয় ১৫ টাকা ১৮ পয়সায় বাণিজ্যিক এলাকায় ৪২ টাকায়। প্রকৃত দামের মাত্র ৪০ শতাংশ দেন আবাসিক গ্রাহকরা। তাদের মোট পানির দামের প্রায় ৬০ শতাংশই সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে আসে। মূলত ভর্তুকির পরিমাণ ১০ টাকা কমিয়ে আনার জন্যই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাব বিবেচনার জন্য দেয়া হয়েছে। সরকার যদি ভর্তুকি দেয় তাহলে ওয়াসা পানির দাম বাড়াবে না। এখন সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের।

ওয়াসার অদক্ষতা, দুর্নীতি, অপচয় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, রাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হয়। যাদের বেতন লাখ টাকার কাছাকাছি থাকে। কিন্তু ওয়াসার মতো একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন লাখ টাকা হতে পারে না। এটাই প্রমাণ করে যে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি খরচ হচ্ছে। এখন সেই খরচ উঠিয়ে আনতে জনগণের ওপর চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা ওয়াসাকে পানি উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনতে হবে। সিস্টেম লসের পরিমাণ কমাতে হবে। সেসব পদ্ধতিতে খরচ কমানোর চিন্তা না করে দাম বাড়ানোর কথা ভাবলে চলবে না। এমনিতেই এখন সাধারণ মানুষের অবস্থা বেশ নাজুক। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছে। এমন সময় যদি পানির দামও বাড়ানো হয় তাহলে সেটি গণবিরোধী কাজের সমতুল্য হবে। পানির দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। ওয়াসার বিরুদ্ধে অদক্ষতা দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সেগুলোতে উন্নতি করা গেলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন