বাংলাদেশে কয়লা রফতানিতে আগ্রহী কোল ইন্ডিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

বাংলাদেশে সরাসরি কয়লা রফতানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বের বৃহৎ কয়লা উত্তোলন পরিশোধনকারী কোম্পানি কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড। বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ নেপাল ভুটানেও জ্বালানি পণ্যটি রফতানিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান প্রমোদ আগারওয়াল। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে আগ্রহের কথা জানান তিনি।

এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে করপোরেট কৌশল নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে কয়লা রফতানির প্রস্তাব দেয়া হয়। কয়লা রফতানির বিষয়টি সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ভারত সরকারের প্রতিবেশী প্রথম নীতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, নেপাল ভুটানে কয়লা রফতানির বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে টেক্কা দিতে ওই নীতি এগিয়ে নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কারণে কোল ইন্ডিয়ার প্রস্তাবে ভারত সরকার সায় দিতে পারে। তবে প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলেও এখনই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে রফতানি করা সম্ভব হবে না। কারণ ভারতে বর্তমানে কয়লার যে মজুদ পরিস্থিতি, তাতে বছরের শেষ দিক ছাড়া রফতানি শুরু করা কোল ইন্ডিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না।

বিষয়ে কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বলেন, মজুদের সংকট না থাকলে চলতি অর্থবছরই (আগামী মার্চে শেষ হচ্ছে) রফতানি শুরুর ইচ্ছে তাদের ছিল। কিন্তু আপাতত দেশের বাজারকেই অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে।

কোল ইন্ডিয়া এমন সময় প্রস্তাবটির কথা প্রকাশ করল, যখন বিশ্বব্যাপী কয়লার বাজার বেশ চড়া। একই সঙ্গে বৃহৎ রফতানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে কোল ইন্ডিয়ার এমন আগ্রহকে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ভুটানের সরকারি কর্মকর্তা শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই তিন দেশে বছরে কোটি ৭০ লাখ টন কয়লার চাহিদা রয়েছে বলে ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো নথিতে উল্লেখ করা হয়।

কয়লা উৎপাদন, ব্যবহার আমদানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে কয়লার ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে কোল ইন্ডিয়া। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১০০ কোটি টনে নিয়ে যেতে চায়।

ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, কোল ইন্ডিয়া তাদের বার্ষিক উৎপাদনের শতাংশ রফতানির জন্য আলাদা করে রাখবে। কয়লা রফতানির জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যেতে চায়। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন হবে বলেও জানায় কোম্পানিটি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃবাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো আরো প্রসারিত হবে।

এদিকে কোল ইন্ডিয়ার কয়লা রফতানির আগ্রহের পাশাপাশি ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুতের তিন-চতুর্থাংশ আসে কয়লা থেকে। কয়লা সংকটের কারণে উত্তরের অনেক রাজ্যের বাসিন্দাদের বিদ্যুত্হীন অবস্থায় কাটাতে হয়। ভারতের অভ্যন্তরে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রফতানির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন কয়লা ১৭৭ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। জ্বালানি তেল-গ্যাসের উচ্চমূল্যের সঙ্গে বেড়েছে জ্বালানি পণ্যটির দামও। অবস্থায় রফতানিকারক বৃহৎ দেশগুলোর তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে কয়লা বিক্রিতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।

কোল ইন্ডিয়ার কয়লা রফতানির বিষয়টি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই প্রতিবেশী দেশগুলোরও। বিশেষত বাংলাদেশ সাশ্রয়ী মূল্যের কথা চিন্তা করলে ভারতীয় কয়লার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর জ্বালানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লাকে প্রাধ্যান্য দেয়া হয়। গুণগতমান পরিবেশের কথা চিন্তা করে এসব দেশ থেকে কয়লা আমদানি করা হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর উৎপাদন খরচ চিন্তা করলে ভারতীয় কয়লায় সবচেয়ে বেশি সাশ্রয়ী।

বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। হাজার ৩২০ মেগাওয়াট রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এরই মধ্যে উৎপাদনে সক্ষম হয়ে উঠেছে। একই সক্ষমতার পটুয়াখালীর পায়রায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। এছাড়া মহেশখালীর মাতারবাড়ী, চট্টগ্রাম পায়রায় আরো বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে বৃহৎ রফতানিকারক দেশগুলো থেকে কয়লা আমদানি করার কথা বলা হলেও সাশ্রয়ী মূল্যের ক্ষেত্রে কোল ইন্ডিয়ার প্রস্তাব গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন