নতুন গবেষণা

ফুসফুসে কম, কণ্ঠনালিতে বেশি ক্ষতি করে ওমিক্রন

বণিক বার্তা ডেস্ক

নতুন গবেষণায় ফুসফুসের জন্য ওমিক্রন কম ক্ষতিকর ধারণাটিই আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছয়টি গবেষক দলের উপাত্ত বলছে, ওমিক্রন বেশি আক্রান্ত করে কণ্ঠনালিকে। এটি ফুসফুসের জন্য গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটায় না।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ফুসফুসের চেয়ে কণ্ঠনালিকে বেশি আক্রান্ত করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, গবেষণার ফলে ভাইরাসটি অন্য যেকোনো ধরনের চেয়ে কেন বেশি সংক্রামক কিন্তু কম মৃত্যুর কারণ তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। বড়দিনের সন্ধ্যা থেকে পর্যন্ত -সংক্রান্ত ছয়টি গবেষণার চারটি প্রকাশ পেয়েছে। এতে কভিডের ডেল্টা বা পূর্ববর্তী অন্য ধরনের ফলে ফুসফুসের যতটা ক্ষতি হতো, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রা ততটা নয়। গবেষণাটি অন্য গবেষকদের দ্বারা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক দিনান পিল্লাই বলেছেন, পূর্ববর্তী সব ধরনের মিউটেশনের সঙ্গে ওমিক্রনের পার্থক্য হলো এটি ভিন্ন কোষকে আক্রান্ত করে। সংক্ষেপে বলা যায়, কণ্ঠনালির শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশের কোষকে আক্রান্ত করে ওমিক্রন। ফুসফুসের গভীরের কোষের চেয়ে এটি কণ্ঠনালিতে সংক্রমণ আরো বাড়াচ্ছে। এটা একেবারেই প্রাথমিক গবেষণা, তবে গবেষণাটির মূলকথা এটাই।

যদি ভাইরাসটি গলায় বেশি আক্রান্ত করে তাহলে এটি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। এটিই মূলত ওমিক্রনের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য সহায়ক। ফুসফুসের টিস্যুতে আক্রান্ত করা ভাইরাস মন্দের ভালো, কেননা এটি বিপজ্জনক তবে কম সংক্রামক।

ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের মলিকুলার ভাইরোলজি গবেষক দল কর্তৃক বক্সিং ডেতে ছাপা হওয়া আগে প্রকাশ পাওয়া গবেষণায় ওমিক্রনকে লেস সিভিয়ার ডিজিজ বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো ওমিক্রন গুরুতর রোগ নয়। ইঁদুরের ওপর পরিচালিত গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকদের একজন অধ্যাপক জেমস স্টুয়ার্ট। গবেষণাপত্রটি বলছে, ওমিক্রন আক্রান্তের পর ইঁদুরের ওজন কম কমেছে, ভাইরাসজনিত সমস্যা নিউমোনিয়া-সংক্রান্ত জটিলতাও কম হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি একটি জিজ্ঞাসার জবাব। (গবেষণার) এই প্রাণিজ মডেল দেখিয়েছে, উহানের মূল ভাইরাস কিংবা ডেল্টা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন কম গুরুতর। এটি পরিষ্কার যে ওমিক্রন অতিসংক্রামক, তবে প্রাণীগুলো খুব দ্রুত সুস্থ হয়েছে। প্রাথমিক ইঙ্গিত হলো এটি একটি ভালো খবর। তার মানে এটা নয় যে আমাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বাদ দিতে হবে। ওমিক্রনে মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে। কারণে সবাই পার্টিতে মাস্ক খুলে ফেলতে পারে না।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে একদিকে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাজে আবহাওয়ার কারণে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতে বাতিল হওয়া বিমানের যাত্রীদের মাঝে অসন্তোষ বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শনিবার দেশটির অভ্যন্তরীণ রুটে হাজার ৬০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বৈশ্বিক হিসাবে এটি সাড়ে চার হাজারের বেশি।

বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইট অ্যাওয়ারের হিসাবে বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হাজার ৬০৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী বাতিল হওয়া মোট ফ্লাইটের অর্ধেকের বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে মোট বাতিল হয়েছে হাজার ৫২৯টি ফ্লাইট।

এদিকে ভারতে ওমিক্রনসহ করোনা আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। গতকাল এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি সরকারি সব অফিসে কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে ৫০ শতাংশে। এছাড়া রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে কারফিউ। সময় শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া যাবে। সুইমিং পুল, জিম, স্পা বিউটি পার্লারও বন্ধ থাকবে।

পশ্চিমবঙ্গের চিফ সেক্রেটারি এইচকে দ্বিবেদি বলেন, ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে অফিস চালানোর এই সময়ে যেকোনো মিটিং ভার্চুয়ালি করতে হবে। যতটা সম্ভব বাসা থেকে কাজ করতেই উৎসাহিত করতে হবে। কলকাতার মেট্রো সার্ভিসও ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চলবে। স্থানীয় ট্রেন চলাচল করবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে দূরগামী ট্রেনগুলো স্বাভাবিক সময়েই চলাচল করবে।

সিনেমা হল, রেস্টুরেন্ট বারে আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ প্রবেশ করতে পারবে এবং রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক আয়োজনে ৫০ জনের বেশি জমায়েত হতে পারবে না। ঘোষণায় আজ থেকে এসব বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

একদিনেই পশ্চিমবঙ্গে কভিড-১৯- আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে হাজার ৫১২ জন। তাদের মধ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত ছিল ২০ জন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন