বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় মতপার্থক্য নেই —হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কে বড় কোনো মতপার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি কথা বলেন। বৈঠকে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ৫০তম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর তার রাষ্ট্রীয় সফরের প্রস্তুতির কাজে সহায়তা করতেই গতকাল সকালে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। পরে দুপুরে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে অংশ নেন তিনি। প্রায় ৫০ মিনিটব্যাপী চলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা।

বৈঠক শেষে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্টসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে বড় কোনো মতপার্থক্য দেখা যায়নি। কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাপারে দুই দেশ একত্রে কীভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মধ্যম আয়ের দেশে পরিবর্তন হওয়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে ভারতীয় সচিব বলেন, এসব সফলতায় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত গর্বিত। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হয়ে যাত্রায় সঙ্গে থাকতে পেরে বন্ধু দেশ হিসেবে আনন্দিত ভারত। দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আরো আলাপ-আলোচনা করব।

দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃযোগাযোগ সম্পর্কে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, কানেকটিভিটিতে আমরা দুই দেশ বেশ ভালো করেছি। ১৯৬৫ সালের ছয়টি রেল সংযোগের পাঁচটি আমরা আবারো চালু করেছি। আরেকটি সামনের বছর চালু হবে। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ করা হচ্ছে। আমরা অভ্যন্তরীণ নদীপথ, রেলপথের মাল্টিমোডাল বা বিভিন্ন মাধ্যমের কানেকটিভিটিতে যোগ দিচ্ছি। আমরা পরিবেশবান্ধব নদীপথের সংযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

ভারতের সচিব আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের অনেক সেনা জীবন দিয়েছেন। এমন ঘটনাকে বিরল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের বিজয়ে গর্বিত। আমরা আপনাদের উদযাপনে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেছেন। একই বছর একই দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সফর একটি রেকর্ড তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আরো বলেন, ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। করোনা পরিস্থিতির পর এটি রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দর দেশের বাইরে প্রথম সফর হতে যাচ্ছে। গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে বলেও উল্লেখ করে শ্রিংলা।

দুই পক্ষের বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে বহুমাত্রিক অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনের দিনে সম্পর্ককে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি কভিডবিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ওমিক্রন নামে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন ছড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই দুই দেশের মধ্যে কভিড সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশই কভিড সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। কারণ ভারত যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে না। একইভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ না থাকলে ভারতও নিরাপদে থাকবে না। এছাড়া ভবিষ্যতে যোগাযোগ, সবুজ বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, -কমার্স নতুন প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে আরো সহযোগিতা বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া সীমান্তে শান্তি বিরাজ রাখতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে বিষয়েও দুই দেশের সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয়।

এছাড়া গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বৈঠক শেষে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না, যা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চমত্কার সোনালি অধ্যায়ে ফাটল ধরাতে পারে। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে সীমান্ত হত্যা পানি বণ্টনসহ বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সীমান্তের অবাঞ্ছিত ঘটনা রোধে ভারত একটি ফর্মুলা দিয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে পরবর্তী যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ভারতকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। বিষয়ে গতকাল ভারতীয় সচিব বলেন, ভারত অবশ্যই উচ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক ডিসেম্বরে একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে। কভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর আগে গত বছরের মার্চে শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন