ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আবারো ক্ষতের আশঙ্কা আইএমএফের

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিডের পরপর কয়েকটি প্রবাহের অভিঘাত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর মধ্যেই আবার শনাক্ত হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। ধরনটির দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর সক্ষমতা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী নতুন করে আতঙ্কের সঞ্চার করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) এখন ওমিক্রনের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আবারো বড় আকারের ক্ষত দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ সংশোধন করে কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সংস্থাটি। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল কথা জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০টি দেশে ধরনটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার ভাষ্যমতে, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি খুব দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে।  বিষয়টি অর্থনীতি নিয়ে যাবতীয় প্রত্যাশাকে হতাশায় রূপ দিতে পারে। অক্টোবরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফ যে প্রক্ষেপণ দিয়েছিল, শিগগিরই সেটি কমিয়ে আনা হতে পারে।

এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য হাতে পাননি গবেষকরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনার নতুন ধরনটিতে সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী আরেকটি ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে। কারণে ধরনটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে খুব সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারে।

ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের একাংশ এখনো করোনার ডেল্টা ধরনের সংক্রমণপ্রবাহের ধাক্কায় বিপর্যস্ত। এর মধ্যে নতুন ধরনের আবির্ভাব লকডাউন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাঘাতের ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতিগুলোর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমণপ্রবাহ থেকে বিশ্বের কোনো দেশই নিরাপদ নয়। যদিও এখনো বিশ্বব্যাপী করোনার ডেল্টা ধরনের প্রাধান্যই বেশি। বিশ্বব্যাপী এখনো মোট সংক্রমণ শনাক্তের ৯৯ শতাংশই কভিডের ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত।

বিষয়ে ডব্লিউএইচওর চিফ সায়েন্টিস্ট সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, আমাদের এখন প্রস্তুত সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। কারণ আমরা এখন এক বছর আগের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছি।

তবে ওমিক্রন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান টিকাগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির জরুরি অবস্থাবিষয়ক পরিচালক মাইক রায়ান জানিয়েছেন, ওমিক্রন প্রতিরোধে কভিডের বিদ্যমান টিকাগুলোয় কোনো ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং মুহূর্তে ওমিক্রন প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, আমাদের এখন উচিত মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা।

যদিও ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমায়ার জেনেভায় জাতিসংঘে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন নির্মাতাদের উচিত এখন তাদের বাজারজাত করা কভিডের বিদ্যমান টিকাগুলোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা।

ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কভিডের টিকা তৈরি করছে জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দরকার পড়লে কোম্পানিটি খুব দ্রুত টিকায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসতে প্রস্তুত। তবে বিদ্যমান টিকাগুলো কভিডের ধরন যা- হোক না কেন, এগুলোর সংক্রমণজনিত অসুস্থতার ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

বিষয়ে ফাইজারের প্রধান উগুর শাহীন বলেন, আমি মনে করি, একটি পর্যায়ে এসে আমাদের হয়তো নতুন ধরনের বিরুদ্ধে নতুন টিকার প্রয়োজনীয়তা পড়লেও পড়তে পারে। প্রশ্ন হলো, কত দ্রুত তা বাজারে চলে আসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন