পুঁজিবাজার পরিস্থিতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে বসছে অর্থ মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতবিরোধের মধ্যে এবার পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার কার্যক্রম সমন্বয় তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে আগামী মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব . নাহিদ হোসেনের সই করা -সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অংশীজনের মতবিনিময় সভার প্রস্তাবগুলো যথাযথ বাস্তবায়নকাজ সমন্বয় তদারকির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রতিনিধি ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দীন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আগেই অংশীজনের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবায়ন, অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে।

এদিকে কয়েক মাস ধরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় টানা আট কার্যদিবস দরপতন হয় শেয়ারবাজারে। পরিস্থিতিতে গত ৩০ নভেম্বর পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। বৈঠক শেষে বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্রিফ করে বলা হয়, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় দুই সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় যোগাযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজার ভালো করার জন্য উভয় সংস্থার চেষ্টা অব্যাহত। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা করে যাবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর গত বুধবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনে বেড়ে যায় ১৪৩ পয়েন্ট।

তবে বিএসইসির ব্রিফিংয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে গত ৩০ নভেম্বর বিএসইসির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সভা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসির উদ্যোগে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং পুঞ্জীভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বছরের মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এতে আরো বলা হয়, সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩৫()() ধারা ২২ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩-এর ১০ ধারার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অদাবীকৃত তহবিল স্থানান্তরের এবং পুঞ্জীভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বছরের মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়টি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আইনসম্মত নয় বলে বিএসইসির প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়। বিষয়ে বিএসইসির জারি করা প্রজ্ঞাপনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া সভায় পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ-সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩- পুঁজিবাজারে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যমান কতিপয় আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়েও বিএসইসির প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়। তবে এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জানিয়েছে, সভা শেষে বিএসইসির প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সভায় কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়।

এরপর গতকাল লেনদেন শুরু হতেই বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর শেয়ারবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে শুরুর পতনের ধাক্কা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরে পুঁজিবাজার। গতকাল লেনদেনের শেষ দিকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইউনিটের দাম বাড়ায় সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৬৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২১ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন