টোকিও অলিম্পিক

শেষ দিনের চমকে শীর্ষস্থান যুক্তরাষ্ট্রের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অলিম্পিকে টানা সাতবার চ্যাম্পিয়ন, ৫৫ ম্যাচে অপরাজিত। যুক্তরাষ্ট্র নারী বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের এমন আনন্দই মানায় ছবি: এপি

টোকিও অলিম্পিকে শনিবার ৩৮টি স্বর্ণসহ ৮৭টি পদক নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ছিল চীন, ৩৫টি স্বর্ণসহ ১০৬টি পদক নিয়ে দুইয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল সমাপনী দিন পাল্টে গেল পদক তালিকার চিত্র। শেষ দিন আরো তিনটি স্বর্ণপদক জিতে নিয়ে চীনকে টপকে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন চীন কোনো স্বর্ণ জিততে পারেনি।

৩৯টি স্বর্ণসহ ১১৩টি পদক জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র, আর চীনের অর্জন ৩৮টি স্বর্ণসহ ৮৮টি পদক। স্বাগতিক জাপান ২৭টি স্বর্ণসহ ৫৮টি পদক নিয়ে টেবিলের তিনে থেকে টোকিও গেমস শেষ করেছে। এছাড়া গ্রেট ব্রিটেন ২২টি স্বর্ণসহ ৬৫টি পদক নিয়ে চারে এবং রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটি ২০টি স্বর্ণসহ ৭১টি পদক নিয়ে টেবিলের পাঁচ নম্বরে থেকে ২০২০ টোকিও অলিম্পিক শেষ করেছে।

এবার স্বর্ণপদক জিততে পেরেছে মোট ৬৩টি দেশ, আর পদক জিতেছে মোট ৮৬টি দেশ।

গতকাল শেষ দিন মেয়েদের বাস্কেটবল, ভলিবল সাইক্লিংয়ে অমনিয়াম ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে নেয় আমেরিকানরা। এর মধ্য দিয়ে তারা টোকিও গেমসের শ্রেষ্ঠত্বও নিশ্চিত করে।

অলিম্পিকের ৩২ আসরের ইতিহাসে ১৮ বারই পদক তালিকার শীর্ষস্থানধারী দলের নাম যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সাতবার এবং ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানি চীন একবার করে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে।

এছাড়া অলিম্পিক ইতিহাসে সর্বাধিক স্বর্ণ আর সর্বাধিক পদক জয়ের কৃতিত্বও যুক্তরাষ্ট্রের। হাজার ৫১টি স্বর্ণসহ অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন হাজার ৬১৪টি পদক। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৯৫টি স্বর্ণসহ হাজার ১০টি পদক নিয়ে দুইয়ে, গ্রেট ব্রিটেন ২৬৩টি স্বর্ণসহ ৮৫১ পদক নিয়ে তিনে আর চীন ২২৪টি স্বর্ণসহ ৫৪৬টি পদক নিয়ে টেবিলের চারে অবস্থান করছে।

মেয়েদের বাস্কেটবলে যুক্তরাষ্ট্রের টানা সপ্তম শিরোপা

ব্রিটনি গ্রিনার একাই ৯০ পয়েন্ট স্কোর করে জাপানের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে এনে দিলেন ৯০-৭৫ পয়েন্টের আয়েশি জয়। এর মধ্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসে টানা সপ্তম স্বর্ণপদক জয়ের কৃতিত্ব দেখাল আমেরিকানরা।

যুক্তরাষ্ট্রের টানা সাত অলিম্পিক স্বর্ণজয়ের মিশনে পাঁচবারই দলের অংশ ছিলেন সু বার্ড ডানা তাউরাসি। অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের জার্সিতে তাউরাসির চেয়ে বেশি ম্যাচ কেউ খেলেনি (৩৮) অলিম্পিকে ৩৬ ম্যাচ খেলে দুইয়ে তাউরাসি।

অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণযাত্রার শুরু ১৯৯৬ সালে। ওই দলের খেলোয়াড় ছিলেন ডন স্ট্যালে। পরে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসেবেও স্বর্ণজয়ী অলিম্পিক দলের সঙ্গে ছিলেন। প্রয়াত আন্নে ডনোভানের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে কীর্তিটা রয়েছে স্ট্যালের।

গতকাল ফাইনালে ১৯ পয়েন্ট স্কোর করেন জা উইলসন আর ব্রিয়ান্না স্টুয়ার্টের অবদান ১৪ পয়েন্ট। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকানদের কর্তৃত্ব বজায় থাকল। ১৯৯২ সালে ব্রোঞ্জ ম্যাচে হারের পর অলিম্পিকে ৫৫ ম্যাচে অপরাজিত যুক্তরাষ্ট্র।

এবারই প্রথম নারীদের বাস্কেটবলে কোনো পদক জিতল জাপান। ২০১৬ সালের রিও গেমসে তারা অষ্টম হয়েছিল। এবার ব্রোঞ্জ জিতেছে ফ্রান্স। 

মেয়েদের ভলিবলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্বর্ণ

অলিম্পিক ভলিবলে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতে নিল যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা। গতকাল ব্রাজিলকে সরাসরি সেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এর আগে তারা তিনটি রৌপ্য দুটি ব্রোঞ্জ জেতে, যা স্বর্ণ জেতেনি এমন দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পদক। আমেরিকানরা অবশেষে পেল স্বর্ণের স্বাদ এবং এমন একটি দেশকে ফাইনালে হারাল যারা ২০০৮ ২০১২ সালে ফাইনালে তাদের হারিয়েছিল।

জয়ে খেলোয়াড় কোচ হিসেবে ভলিবলে অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ের কীর্তি গড়লেন কার্চ কিরালি, যা চীনের ল্যাং পিংয়ের পর দ্বিতীয় নজির। ১৯৮৪ ১৯৮৮ সালে ইনডোর ভলিবলে খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণ জিতেছিলেন কিরালি। ১৯৯৬ সালে বিচ ভলিবলেও তিনি স্বর্ণ জয় করেন।

সাইক্লিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বর্ণ এনে দিলেন ভ্যালেন্তে

মেয়েদের অমনিয়াম ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার ভ্যালেন্তে। শেষ দিন জেতায় তার স্বর্ণটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হয়ে উঠেছে মহামূল্যবান। কেননা এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উঠেছে পদক তালিকার শীর্ষে। ইভেন্টে জাপানের ইউমি কাজিহারা রৌপ্য নেদারল্যান্ডসের কারস্টেন ওয়াইল্ড ব্রোঞ্জ জিতেছেন।

সপ্তম অলিম্পিক স্বর্ণ জিতলেন জ্যাসন কেনি

প্রথম ব্রিটিশ সাইক্লিস্ট হিসেবে অলিম্পিকে সাতটি স্বর্ণপদক জিতলেন জ্যাসন কেনি। কাল পুরুষদের কেইরিন ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। যদিও এদিন তার স্ত্রী লরা কেনি মেয়েদের অমনিয়াম ইভেন্টে রিওর মুকুট ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

অমনিয়ামে টানা তৃতীয় শিরোপার জন্য খেলা লরা শুরুর দিকে সংঘর্ষে পতিত হন, যদিও তা কাটিয়ে উঠে শেষ পর্যন্ত তিনি ষষ্ঠ হয়েছেন। পাঁচটি স্বর্ণ জিতে তিনি ব্রিটেনের সফলতম নারী অলিম্পিক সাইক্লিস্ট।

পুরুষ কেইরিনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চমকে দিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন জ্যাসন কেনি। তিন ল্যাপ বাকি থাকতেই তিনি জয় তুলে নেন। এটা অলিম্পিকে তার সপ্তম স্বর্ণ সব মিলিয়ে নবম পদক।

টোকিওতে টিম স্প্রিন্টে রৌপ্য জিতে ব্রিটেনের সবচেয়ে সফলতম অলিম্পিয়ান হন জ্যাসন, যদিও এককে শিরোপা ধরে রাখতে পারেননি। এবার কেইরিনে সফল হলেন ৩৩ বছর বয়সী সাইক্লিস্ট।

জয় শেষে জ্যাসন বলেন, সাতটি স্বর্ণ সত্যিই বিশেষ কিছু। পেছন ফিরে তাকালে একটি জেতা সহজই ছিল, এরপর যখনই আপনি আরো জিততে চেয়েছেন তা প্রতিবারই কঠিন ছিল। এই সপ্তাহে আমি হতাশ হয়েছি। আমি যেমনটি চেয়েছি তেমন সহজ ছিল না প্রতিযোগিতা।

সাতটি স্বর্ণ দুটি রৌপ্যসহ নয়টি পদক জিতে ব্রিটেনের সফলতম অলিম্পিয়ান এখন জ্যাসন কেনি। স্যার ক্রিস হয় ছয়টি স্বর্ণসহ জিতেছিলেন সাতটি অলিম্পিক পদক।

লরা কেনি জিতেছেন পাঁচটি স্বর্ণ একটি রৌপ্য। অলিম্পিকে যুগলের অর্জন মোট ১৫টি পদক, যার মধ্যে ১২টিই স্বর্ণ।

সমাপনী দিনের অন্যান্য খেলার ফল

কাল শেষ দিন পুরুষদের ম্যারাথনে কেনিয়ার এলিউড কিপচোগে, মেয়েদের ৬০ কেজি লাইটওয়েট বক্সিংয়ে আয়ারল্যান্ডের কেলি হেরিংটন, পুরুষ সুপার হেভিওয়েট (+৯১ কেজি) বক্সিংয়ে উজবেকিস্তানের বখোদির জালোলভ, মেয়েদের মিডলওয়েট (৬৯-৭৫ কেজি) বক্সিংয়ে ব্রিটেনের লরেন প্রাইস, সাইক্লিং নারী স্প্রিন্টে কানাডার কেসলি মিচেল, রিদমিক জিমন্যাস্টিকস গ্রুপ অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে বুলগেরিয়া, পুুরুষ ওয়াটারপোলোয় সার্বিয়া স্বর্ণ জিতেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন