যে কারণে সহসাই কাটছে না চিপ সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

সাময়িকভাবে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ থাকায় সাপ্লাই চেইনে চাপ বেড়েছে ছবি : দ্য ভার্জ

বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের সংকট বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ বার্তা দিয়েছে। এতে গাড়ি থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, হেডফোনের উৎপাদনও সীমিত হয়ে গেছে। চিপের অভাব ক্ষুদ্র উপাদানগুলোর ওপর আধুনিক বিশ্বের নির্ভরতা প্রকাশ করেছে।

২০২০ সালের প্রথমদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ায় ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ে। বিশেষ করে বাসা থেকে কাজের পাশাপাশি লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে গেমিং ডিভাইস, কম্পিউটার স্মার্টফোনের ব্যবহারও বেড়েছে।

মহামারীতে সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে তা পণ্য সরবরাহের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে শুধু করোনা মহামারীই চিপ স্বল্পতার প্রধান কারণ নয়। ফেব্রুয়ারিতে ঝড়ের কারণে টেক্সাসের অনেক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে মার্চে জাপানের একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এসবের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক সম্পর্কের অবনতিও খাতে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের কাছে চিপ বিক্রি বন্ধে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে থেকেই সেমিকন্ডাক্টর মজুদ শুরু করে হুয়াওয়ে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও হুয়াওয়েকে অনুসরণ করে। যার ফলে সেমিকন্ডাক্টরের সংকট আরো বাড়ে।

চিপ সংকটের কারণে বিশ্বের গাড়ি উৎপাদন শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মজুদে থাকা চিপের কারণে এতদিন তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। তবে বর্তমানে তারাও সমস্যার মুখে পড়ছেন।

চলতি সপ্তাহে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক আইফোন আইপ্যাডের উৎপাদনে চিপ সংকটের প্রভাব পড়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গবেষকরা জানান, সংকটের কারণে ক্ষুদ্র ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

প্লে স্টেশন এক্সবক্স সিরিজ এক্সের সরবরাহও অনেক কমে গেছে। এর পাশাপাশি গেমিং কম্পিউটার নির্মাণের অন্যতম অংশ গ্রাফিক্স কার্ডের সরবরাহও অনেক কমে গেছে এবং দামও নাগালের বাইরে।

চিপ সংকট দূর করতে উৎপাদনকারী দেশগুলোর সরকার তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়া ৪৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে যাত্রা করবে। অন্যদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট চিপ প্লান্টে ভর্তুকি প্রদানে হাজার ২০০ কোটি ডলারের অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী তাদের চিপ-উৎপাদন ক্ষমতা ২০ শতাংশে উন্নীত করার ব্যাপারে কাজ করছে।

গ্লোবাল সেমিকন্ডাক্টরস প্র্যাকটিস কনসালট্যান্সি ম্যাককিনসির সিনিয়র পার্টনার অন্দ্রে বারকাকি বলেন, নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা সময়সাপেক্ষ। বিশেষ করে নতুন ফ্যাব স্থাপনে আড়াই বছরের বেশি সময় দরকার। তাই বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তারা ২০২৩ সালের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন বাড়াতে পারবে না।

দ্য ভার্জ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন