কভিড-১৯ মহামারী

বিপুল চিকিৎসা ঋণে জর্জরিত ভারতীয়রা

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুই মাস ধরে ছেলেকে দেখতে এভাবেই প্রতিদিন হাসপাতালে গেছেন অনিল শর্মা ছবি: এপি

চলতি বছরের শুরুর দিকে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পড়ে ভারত। দ্রুতই সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। মে মাসে দৈনিক সংক্রমণ চার লাখের সীমাও পেরিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নেয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। আবার হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ঋণের দিকে ঝুঁকতে হয় ভারতীয়দের। বর্তমানে মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা পার হলেও ভারতীয়রা এখন চিকিৎসা ঋণে জর্জরিত।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কভিডের সংক্রমণের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে জীবনযাপন। তবে লাখ লাখ মানুষের দুঃস্বপ্ন হয়ে থেকে গেছে পাহাড় পরিমাণ চিকিৎসা ঋণ। বেশির ভাগ ভারতীয়ের স্বাস্থ্য বীমা নেই। এজন্য কভিডের চিকিৎসা ব্যয় তাদের ঋণের সমুদ্রে ডুবিয়েছে। প্রথমদিকে আত্মীয়-স্বজন থেকে ধার করে ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করলেও অবশেষে তাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে।

অনিল শর্মা তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে সৌরভকে নয়াদিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। দুই মাসেরও বেশি সময় তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। তাকে ভেন্টিলেটরও লাগানো হয়েছিল। গত সপ্তাহে সে বাড়িতে ফিরেছে। দুর্বল থাকলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। খবর পরিবারকে আনন্দ দিতে পারলেও ঋণের বোঝা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শর্মা।

শর্মা তার সঞ্চয় দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পরীক্ষা, ওষুধ আইসিইউ বিছানার ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি জানান, ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার বন্ধু আত্মীয়দের থেকে ধার করেছিলেন। তবে ব্যয় মেটাতে না পেরে তিনি ভারতীয় একটি ক্রাউড ফান্ডিং ওয়েবসাইট কেটোতে অনলাইনে সহায়তার আবেদন করেন।

সব মিলিয়ে মেডিকেল বিলে ৫০ হাজার ডলারেরও বেশি পরিশোধ করেছেন শর্মা। কেটো থেকে ২৮ হাজার ডলার সংগ্রহ হয়েছিল। তবে বাকি ২৬ হাজার ডলার নেয়া ঋণ তাকে পরিশোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, সৌরভ তার জীবনের জন্য লড়াই করে যাচ্ছিল এবং আমরা তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছিলাম। কথা বলতেই অনিল শর্মার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। তিনি বলেন, আমি একজন গর্বিত বাবা এবং এখন ভিক্ষুক হয়েছি।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইম্ফল শহরের ডায়ানা খুমান্থেমের মা বোন মে মাসে কভিডে আক্রান্ত হয়েছিল। দুজনের চিকিৎসা ব্যয় পরিবারের সব সঞ্চয় নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তার বোন মারা গেলে বেসরকারি হাসপাতালে হাজার ডলার বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত মরদেহটি শেষকৃত্যের জন্য ছাড়েনি। পরে ডায়ানা পরিবারের গহনাগুলো বন্ধক ধার করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। এখনো তার হাজার ডলারের দেনা রয়েছে।

মহামারীটি ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষকে আর্থিক সংকটে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধরনের ব্যয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা।

পাবলিক পলিসিতে অধ্যয়নরত অর্থনীতিবিদ বিবেক দেহেজিয়া বলেন, আমাদের জোড়াতালি দেয়া অসম্পূর্ণ পাবলিক ইন্স্যুরেন্স এবং একটি দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আছে। মহামারীটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দুই ব্যবস্থা কতটা অকার্যকর।

এমনকি মহামারীর আগেও ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। ভারতীয়রা তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৩ শতাংশ নিজ পকেট থেকে ব্যয় করেন। অপ্রতুল সরকারি পরিষেবার চিত্র অনেক দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রেই সাধারণ। মহামারীতে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাব পাওয়া খুব কঠিন। তবে ভারত অন্যান্য অনেক দেশে ব্যয় এমন সময়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন লাখ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছেন।

গত মার্চে প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারীটি কোটি ২০ লাখ মধ্যবিত্ত ভারতীয়কে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, আপনি যদি লোকদের ঋণ কিংবা দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়ার কারণ অনুসন্ধান করেন, তবে দেখতে পাবেন সেখানে অন্যতম কারণ হলো বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা ব্যয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন