পর্যালোচনা

কভিড মহামারী অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত সৃষ্টি করছে কি

রিজওয়ানুল ইসলাম

সুসংবাদ: বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দা থেকে বের

হয়ে আসছে

কভিড মহামারীতে ক্ষতবিক্ষত বিশ্বের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বলে মনে হয়। আইএমএফ ওইসিডি দুই সংস্থার পূর্বাভাসেই বলা হয়েছে ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মে মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সংখ্যা থেকে মনে হয় যে দেশটির শ্রমবাজারের স্বাস্থ্যও ভালো হচ্ছে

উন্নয়নশীল বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে যাদের অর্থনীতি উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারাও ২০২০ সালের দুর্দশা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে চীন ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক দশমিক শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সুসংবাদ রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও: মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও পরপর দুই বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

তবে সুসংবাদের পেছনে বিপদের সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকতে পারে

উল্লিখিত সুসংবাদ থেকে মনে হতে পারে যে কভিড মহামারীর ফলে অর্থনীতিতে যে মন্দা বা নিম্নগতি দেখা গিয়েছিল, তা এখন অতীতের বিষয় এবং শিগগিরই স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি শুরু হবে। আসলে কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। আইএমএফ তাদের ২০২১-এর এপ্রিলের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথাও বলছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রকম দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?

কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি ধারায় ছেদ পড়েছে

প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা। উল্লেখ করতে হয় যে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ক্রমাগত ত্বরণ ঘটছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে সে ধারায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় বিষয়টি প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হবে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পএমনটিই আশা করা হয়। কয়েক বছর ধরে খাতের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে ত্বরণ ঘটছিল এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সে হার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। সে ধারা দেখে মনে হচ্ছিল যে দক্ষিণ কোরিয়া মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশেও খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। কিন্তু তার পরের বছরই ধারায় ছেদ পড়ে।

তৃতীয়ত, যে শিল্পটি (তৈরি পোশাক) রফতানিতে বিরাট ভূমিকা রাখছিল, মহামারী শুরু হওয়ার আগেই তার রফতানিতে ভাটা পড়ছিল। আর মহামারীর প্রথম বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আগের বছরের চেয়ে অনেক কমে যায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে কিছুটা উন্নতি হলেও মোট রফতানি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (অর্থাৎ মহামারীর আগের শেষ স্বাভাবিক বছরের) পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে বলে মনে হয় না। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ সময়কালে খাতের বার্ষিক রফতানি বৃদ্ধির হার ছিল শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে যদি রফতানি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর্যায়ে পোঁছতে হয়, তবে প্রবৃদ্ধি হতে হবে শতাংশ। সংখ্যাগুলো থেকে সহজেই অনুমান করা যায় দীর্ঘমেয়াদের চ্যালেঞ্জটি কেমন।

চতুর্থত, কয়েক দশক পর দারিদ্র্য হ্রাসের ধারায় ছেদ পড়েছে। যদিও ২০১৯-২০ সালে দারিদ্র্যের হার কত হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো সরকারি উপাত্ত নেই। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায় যে নিম্ন আয়ের বড় একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। কেউ হয়তো বলতে পারেন যে ধরনের প্রবণতা সাময়িক এবং এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ অর্থনীতিতে ঊর্ধ্বগতি শুরু হলে সাময়িকভাবে দরিদ্র হয়ে যাওয়া লোকেরা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে বিষয়টিকে এভাবে উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। নতুনভাবে দরিদ্র হয়ে যাওয়া লোকেরা কত দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে, সেটি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে এই যে সংকটের সময় তারা কীভাবে জীবন ধারণ করছেন। সরকারি সাহায্যের অপ্রতুলতার কারণে অনেককেই নির্ভর করতে হচ্ছে নিজের সামান্য সঞ্চয় ব্যক্তিগত ঋণের ওপর। ফলে তাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অর্থনীতিতে যে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে তা সারতে যে বেশ সময় লাগতে পারে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না

পঞ্চমত, বাংলাদেশ যেহেতু উদ্বৃত্ত শ্রমের দেশ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সনাতন (যেমন কৃষি) খাত থেকে শ্রমের আধুনিক খাতে যাওয়া এবং সেই প্রক্রিয়ায় উদ্বৃত্ত শ্রম শেষ হওয়া উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাধারণভাবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার কোনো এক পর্যায়ে দেখা যায় যে উদ্বৃত্ত শ্রম আর নেই এবং আধুনিক খাতগুলোয় কর্মসংস্থান বাড়লে মজুরিও বাড়ে। কয়েক বছর ধরে মনে হচ্ছিল যে উদ্বৃত্ত শ্রম শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এখন ধারায় ছেদ পড়ল। কারণ ২০২০ সালের সংকটের সময় দেখা গেল যে শহরের কাজ হারিয়ে অনেকেই তাদের গ্রামের শিকড়ে ফিরে যাচ্ছে নিরাপত্তার খোঁজে। কবে এই উল্টোমুখী প্রবণতায় পরিবর্তন আসবে এবং উন্নয়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হবে, সেটি দেখার বিষয়।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনা

কভিড মহামারীর সংকটে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই ধাক্কা খেয়েছে ঠিকই কিন্তু সব খাতের ওপর সংকটের অভিঘাত এক রকম হয়নি; তেমনি বিভিন্ন আয়তনের উদ্যোগ সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে বড়-ছোট সবার জন্যই ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখাই ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবেলা করতে গিয়ে নজর দিতে হয়েছে তাত্ক্ষণিক সমস্যার দিকে। রকম সময় সাধারণত উদ্যোগের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য যেমন উৎপাদিকা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হয় না। আর তার ফলে সৃষ্টি হয় কাঠামোগত দুর্বলতা।

অনানুষ্ঠানিক খাতের যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসা মূলত জীবিকার জন্য তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তাদের সমস্যা আরো প্রকট। অনেকের জন্য সংকটের সময় জীবনধারণই ছিল সমস্যা। সুতরাং তাদের ব্যবসার আকার বাড়ানো বা উন্নতির সুযোগ সামান্যই ছিল। যদিও সরকারের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমে ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য একটি অংশ রয়েছে, অতিক্ষুদ্রদের পক্ষে সেখান থেকে সহায়তা পাওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ধরনের অনেক উদ্যোগ সংকটের সময় একেবার বন্ধ হয়ে গেছে অথবা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। অনেককেই শুধু দৈনন্দিন ভরণ-পোষণের জন্য অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। তাদের পক্ষে কত দিনে আবার স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে, তা দেখার বিষয়।

শ্রমবাজারে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তার ফল থেকে যেতে পারে অনেক দিন

দু-একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে যারা লকডাউনের সময় কাজ হারিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু হওয়ার পর তারা কাজ ফিরে পেয়েছেন। ধরনের উপাত্ত থেকে মনে হতে পারে যে সংকটের সময় কাজ হারানোর বিষয়টি ছিল সাময়িক। সুতরাং কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বিষয়টিকে এভাবে দেখা ঠিক নয়।

যারা নিজের ব্যবসায় স্বনিয়োজিত ছিলেন অথবা পরিবারের কাজে সহায়তা করছিলেন তারা হয়তো তাড়াতাড়িই কাজে ফিরে যেতে পেরেছেন। কিন্তু সবার অবস্থাই এক রকম ছিল না। কোনো কোনো খাতে লকডাউনের পরও পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি। আর তার ফলে একদিকে যেমন কিছু কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, অন্যদিকে নতুন নিয়োগ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। যেসব খাতে কর্মীর শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন হয়, যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁ, পাইকারি খুচরা ব্যবসা, যেখানে অনলাইন বেচাকেনা চালু হয়নি, পরিবহন ইত্যাদি খাতে শ্রমবাজার বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনলাইন চাকরির বিজ্ঞপ্তির ধারা থেকেও দেখা গেছে আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

রকম অবস্থায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুবকশ্রেণী, বিশেষ করে যাদের সংকটের সময় শ্রমবাজারে প্রবেশের সময় হয়। অতীতের অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা শ্রমবাজারে প্রবেশের সময়ই অসুবিধায় পড়েন, তারা তাদের কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন। যেমন যারা শুরুতেই অনেক দিন বেকার থাকেন, তারা পরেও আবার বেকারত্বের সম্মুখীন হতে পারেন। অন্যদিকে যারা শ্রমবাজারের দুর্বলতার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন, তাদেরকে ভবিষ্যতেও ধরনের অবস্থায় পড়তে হয়।

কভিড মহামারীর কারণে শিক্ষা খাত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। অনলাইন শিক্ষার কথা বলা হলেও বিশাল একটি শ্রেণী বিকল্পের বাইরে রয়ে গেছে। তাছাড়া শিক্ষায়তনে উপস্থিতির মাধ্যমে পরিপূর্ণ শিক্ষার যে সম্ভাবনা থাকে, শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তা যে সম্ভব নয়, সে বিষয়েও তেমন দ্বিমত নেই। এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগৎ থেকে যে ধরনের শিক্ষা দক্ষতা অর্জিত হয় সেসব ক্ষেত্রে। আংশিক জোড়াতালির শিক্ষা সমাপ্ত করে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করবে, ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকাটাই স্বাভাবিক।

কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন লেখাপড়া চালু হওয়ায় সমাজে বৈষম্য আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাম শহরের পার্থক্য, বিভিন্ন আয়ের পরিবারের সামর্থ্যের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি কারণে অনলাইন শিক্ষার সুবিধা সবাই সমানভাবে নিতে পারছে না। ধরনের বৈষম্যের কথা উন্নত দেশগুলোয়ও বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এর সম্ভাবনা আরো বেশি। সমাজের একটি বিরাট অংশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং কারণে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও রয়েছে ক্ষতির মুখে।

শিক্ষা প্রশিক্ষণের জগতের সমস্যার কারণে শুধু যে তরুণসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয়, এর ক্ষতিকর প্রভাব অর্থনীতিতে এবং সমাজেও পড়তে বাধ্য। আর এটি হচ্ছে এমন সময়, যখন দেশের অর্থনীতি নিম্নমধ্যম আয়ের স্তর থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের স্তরে যাত্রা করেছে। যাত্রায় সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে শ্রমশক্তির শিক্ষা দক্ষতার ওপর।

দীর্ঘমেয়াদের প্রবৃদ্ধির বিষয়টি হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়

বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছুটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভীষ্ট রয়েছে, যেগুলো অর্জনের জন্য উচ্চহারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে উঠতে হলে বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে হবে শতাংশ। তেমনি ২০৩১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলেও উচ্চহারে প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। যখন প্রবৃদ্ধি শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছিল তখন শতাংশ খুব দূরে মনে হয়নি। কিন্তু মহামারী-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ হবে প্রবৃদ্ধি - শতাংশ থেকে শতাংশে ওঠানো। সে প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে দু-একটি উদাহরণ আনা যেতে পারে।

১৯৮০ ৯০-এর দশকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশকে এশিয়ান টাইগার বলে আখ্যায়িত করা হতো। ১৯৯০-৯৬ সময়কালে মালয়েশিয়া থাইল্যান্ডের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে দশমিক দশমিক শতাংশ। কিন্তু ১৯৯৭-৯৮ সালে সেসব দেশ যখন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তখন থেকে অবস্থা বেশ বদলে যায়। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে প্রবৃদ্ধির ধারায় ছেদ পড়ে এবং তার পর দেশগুলো আর উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যেতে পারেনি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সময়ে তাদের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে দশমিক এবং দশমিক শতাংশ।

যদিও সব দেশের অভিজ্ঞতা এক রকম হবে এমন কোনো কথা নেই, ইতিহাস থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা অগ্রাহ্য করা কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অর্থনীতি শ্রমবাজারে কী ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এবং কীভাবে তা কাটিয়ে ওঠা যাবেএসব বিষয়ের প্রতি নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেয়া উচিত।

 

রিজওয়ানুল ইসলাম: অর্থনীতিবিদ, আইএলওর এমপ্লয়মেন্ট বিভাগের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা, তার সাম্প্রতিক গ্রন্থ করোনাঘাতে অর্থনীতি শ্রমবাজার (বাতিঘর, মার্চ ২০২১)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন