টোল প্লাজায় গাড়ি পার হতে লাগছে ১৮ সেকেন্ড

বঙ্গবন্ধু সেতুতে সময়ক্ষেপণে উত্তরাঞ্চলে যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮-২০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় কিংবা সামাজিক উৎসবের আগে-পরে দৈনিক যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এখন পর্যন্ত দেশের দীর্ঘতম সেতু দিয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যানবাহন পারাপার হলেও টোল আদায় কার্যক্রমের ধীরগতিতে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। উৎসবের সময় গাড়ির চাপ বাড়লে টোলপ্লাজা ছাড়িয়ে ৩০-৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয় অপেক্ষমাণ গাড়ির সারি। টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যানজট হচ্ছে বলে মনে করছে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজা দিয়ে একটি গাড়ি পার হতে ১৮ সেকেন্ড সময় লাগে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এনামুল হক। কমিটির সর্বশেষ সভায় তিনি বলেন, সেতুতে গাড়ির পাসিং সময় ১৮ সেকেন্ড অত্যন্ত বেশি। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি - ১০ সেকেন্ডের মধ্যে নমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিসের তথ্য বলছে, সেতুর দুই প্রান্তে সাতটি করে মোট ১৪টি টোলবুথ রয়েছে। এর মধ্যে দুই পাশে একটি করে দুটি টোলবুথে ডিজিটাল লেন চালু রয়েছে। এসব টোলবুথের পাশাপাশি সেতুর পূর্ব প্রান্তে শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য আরো দুটি বুথ চালু করা হয়েছে।

সম্পর্কে জানতে চাইলে সেতুর সাইট অফিসের প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণ সাতটি বুথে মোটরসাইকেল প্রবেশ করলে সেগুলো অন্য গাড়ি পারাপারের জন্য বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়াত। বিশেষ করে ঈদের সময় ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের সংখ্যা বেড়ে গেলে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করত। এজন্য সেতুর পূর্ব প্রান্তে মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য আলাদা আরো দুটি টোলবুথ চালু করা হয়েছে।

টোলবুথ দিয়ে একটি গাড়ি পারাপার হতে ঠিক কত সময় লাগে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ম্যানুয়াল লেনে একটি গাড়ি পার হতে গড়ে ১২-১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগে। অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুতে একটি করে ডিজিটাল লেন চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গাড়ির উইন্ডশিল্ডে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণ ডিভাইস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল পরিশোধ হয়ে যায়। গাড়ির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যায় সেতু কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই গাড়ি পারাপার হয়ে যায় ডিজিটাল লেনে। বর্তমানে ডিজিটাল লেনগুলোতে ম্যানুয়ালিও গাড়ি পারাপার হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তথ্য বলছে, বর্তমানে বছরে প্রায় ৭০ লাখ গাড়ি পারাপার হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে পারাপার হয়েছে ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৪টি গাড়ি। এর মধ্যে শুধু মে মাসেই পারাপার হয়েছে লাখ ২৬ হাজার ২১৬টি যানবাহন। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর এক মাসে এর চেয়ে বেশি যানবাহন আর কখনই পারাপার হয়নি। সামনের দিনগুলোতে সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই তীব্র আকার ধারণ করছে সেতু এলাকায় যানজট। এজন্য টোল কার্যক্রমের ধীরগতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের সেতুগুলোর টোল আদায় কার্যক্রমে পর্যায়ক্রম ডিজিটালাইজ করে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি করে ডিজিটাল লেন চালু করা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। টোল আদায় কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

শুধু বঙ্গবন্ধু সেতু নয়; টোল আদায় কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে যানজট দেখা দিচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, মেঘনা গোমতী সেতু এলাকায়ও। মহাসড়কটিতে গাড়ির চাপ বাড়লেই সেতুগুলোর টোল প্লাজার সামনে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। যদিও টোল আদায় কার্যক্রমে গতি আনতে মহাসড়কটির মেঘনা গোমতী সেতুতে অত্যাধুুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) ব্যবস্থার মাধ্যমে গাড়ির উইন্ডশিল্ডে বসানো যন্ত্র থেকে তথ্য নিয়ে পারাপারের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোলের টাকা কেটে রাখা হয়। রয়েছে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতির ব্যবস্থাও। তবে ডিজিটাল এসব বুথ ব্যবহারে পরিবহন চালকরা খুব একটা আগ্রহী নন। চালকদের দাবি, ইটিসি কিংবা টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতির জন্য নিবন্ধন টাকা রিচার্জ করার বিষয়গুলো জটিল ঝামেলাপূর্ণ। তাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল দিতে আগ্রহ কম চালকদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন