অভিমত

শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ও কিছু ভাবনা

মাছুম বিল্লাহ

বাংলাদেশসহ প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশের বাজেটের সাধারণ  কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন বাজেটের গন্ধ পাওয়ার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, যার ব্যতিক্রম এবারো হয়নি। তেলের দাম প্রতি লিটার থেকে ১১ টাকা এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, বেড়েছে চালের দাম, আলু-পেঁয়াজের দাম। মাঠ পর্যায় থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত সরকারের যারা সরাসরি উপকারভোগী, তারা বাজেট ঘোষাণার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল বের করেন, সব মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকবেন মাসের পর মাস যে এটি জনকল্যাণমুখী বাজেট, এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাজেট ইত্যাদি। রাষ্ট্রের সম্পদ যারা লুট করতে থাকে, তারা যাতে আরো বেশি বেশি লুট করতে পারে, তার জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় বাজেটে। ফলে প্রতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকে, সাধারণ মানুষের জন্য ভ্যাট নামক ট্যাক্সের বোঝা চাপানো। ফলে ১০ টাকার একটি পানির বোতল কিনলেও - টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আর দুটো জায়গায় জনগণকে ধোঁকা দেয়ার দুটি বিষয় সংযোজন করা হয়। তার একটি হচ্ছে কয়েকটি খাতের টাকা একত্র করে বলা হয়, শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অমুক অমুক আইটেমের দাম কমবে। বাজেটের পর কোনো জিনিসের দাম কোনো দিন কমেনি।

করোনার টাইফয়েডে দেশ ধুঁকছে। সেই টাইফয়েডে সজোরে কাঁপছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ১০ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন এবং অনেকে সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। কেজি স্কুল, কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গছে এবং অনেকগুলো চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে ব্যয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। বেসরকারি কলেজ, মেডিকেল কলেজ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপ করা হয়েছে। তাদের আয়ের ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যেমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৮, এভাবে যত্রতত্র এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এতে না বাড়ে শিক্ষার মান, না শিক্ষার কোনো কাজে লাগে। সেখানে মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে রাজনৈতিক ব্যক্তি রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়ার পরিবর্তে সব ক্ষেত্রে মান যাতে অর্জিত হয়, সেজন্য অত্যাধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রচলন করার জন্য বাজেট প্রয়োজন। সেটির কোনো উল্লেখ আমরা বাজেটে দেখতে পেলাম না, বরং বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর নেয়ার একটি ঘোষণা দেখলাম। তো শিক্ষার মান বাদ দিয়ে বাণিজ্যিকীকরণের কৌশল! অলিতে-গলিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে কর্মসংস্থান বাড়ানো আর শিক্ষার মান তলানিতে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইংরেজি মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ইংরেজির শেখার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে চীন, জাপান, কোরিয়ায়ও ইংরেজির দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। যদিও দেশগুলো প্রায় পুরোপুরি স্বাবলম্বী। আর আমরা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল, তাই আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিদেশী ভাষা কার্যকরভাবে শেখানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।   আমরা আমাদের মাতৃভাষা অবশ্যই সঠিকভাবে শেখাব, সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এজন্য যে এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় হাতিয়ার। আমাদের দেশের যেসব অদক্ষ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কাজ করেন, তাদের বৈদেশিক ভাষা শেখানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে। এখানে গোঁজামিল দেয়া কিংবা এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আমরা বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে প্রথম শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি পড়াচ্ছি; যেটি একেবারেই ট্রাডিশনাল। শিক্ষার্থীরা এতে ভাষা শিখছে না, পরীক্ষায় যেভাবে পাস করতে হবে, তারা সেভাবে একটি বিষয়ের মতো ইংরেজি পড়ছে; যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণএর কোনোটিতেই কাজে লাগছে না। এটি যদি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে বেসরকারি পর্যায়ে, পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে কীভাবে তা সম্ভব, সেজন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। ভাষাগত সমস্যার কারণে আমাদের দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিকসহ উচ্চশিক্ষিতরাও দেশের বাইরে তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মানী থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। বিষয়টি বারবার বলা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে না।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল  ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। মাধ্যমিকে ৩৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষায় হাজার ১৫৪ কোটি টাকা এবং গত বছর এটি ছিল হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ২২ কোটি টাকা, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়। মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকা, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়। কারিগরি মাদ্রাসাশিক্ষায় উন্নয়ন ব্যয় বাবদ হাজার ৩১০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়। শিক্ষা খাতে প্রতি বছর বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে। এটি তো অবশ্যই করতে হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেলে তারা কীভাবে শিক্ষাদানের মতো মহৎ কাজে নিজেদের মনোনিবেশ করবেন? এখন শিক্ষার উন্নয়নে যেসব খাত আসে সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক, পেডাগজিক্যাল এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এখন প্রশিক্ষণ হচ্ছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। প্রশিক্ষণ দিচ্ছে টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো, নায়েম এবং সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রশিক্ষণে বাজেট আছে, খরচ করো। কী কাজে লাগল বা না লাগল, কার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, কীভাবে তাদের বাছাই করতে হবেএগুলো কিছুই দেখা হয় না। শুধু বাজেট আছে, খরচ করো। তার পরও শিক্ষার বাজেট থেকে যায়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে কলেজশিক্ষকদেরবিসিএস নন-ক্যাডার এবং সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা যখন শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেন, তারা কিন্তু শিক্ষার্থীই, একজন শিক্ষক হিসেবে তাদের জানা প্রয়োজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আধুনিক যুগে কেমন হওয়া প্রয়োজন, কোন বিষয় কীভাবে পড়াতে হবে, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, দুরন্ত শিক্ষার্থীদের কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ না দিয়ে তাদের সরাসরি শ্রেণীকক্ষে প্রেরণ করা হয়। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ যাতে যথাসময়ে সম্পন্ন হয়, এখানে যাতে বাজেট ঘাটতি না থাকে, সে বিষয়টির উল্লেখ থাকতে হবে। আমরা জানি, হাজার হাজার শিক্ষক আছেন, যাদের কোনো বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ হয়নি। আবার অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন, তাদেরকেও প্রশিক্ষণে ডাকা হয়। আবার প্রশিক্ষণ শুধু প্রতিষ্ঠানে টিটিসি বা নায়েমে ডেকেই  দিতে হবে, সেটিও নয়; কারণ শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তাদের শ্রেণীকক্ষগুলোর অবস্থা সেখান  থেকে সম্পূর্ণ  ভিন্ন। ফলে অধিকাংশ প্রশিক্ষণই কাজে লাগে না। এটির দিকেও নজর দিতে হবে।

করোনার কারণে বাল্যবিবাহ ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিশুশ্রমও বাড়ছে। শিক্ষায় চলমান বিপর্যয় রোধকল্পে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা আবশ্যক। উপরন্তু, ইউনেস্কো গঠিত দেলরস কমিশন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাপ্ত মোট বৈদেশিক সহায়তার ২৫ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার জন্য যে সুপারিশ আছে, বাংলাদেশের তা মেনে চলা উচিত। আগামী দুই-তিন বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। লক্ষ্যে কভিড-১৯-এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১-১২ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ডলার, শ্রীলংকায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫০ ডলার দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি যুক্তিযুক্ত সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন; যা প্রাথমিক স্তরের জন্য :৩০, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য :৪০ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে :২৫-এর বেশি নয়। এসব বিষয়ের প্রতিফলন বাজেটে ঘটেনি।

তবে এমপিও কাঠামোর মধ্যে না থাকা বেসরকারি স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর সংশোধিত (২০২০-২০২১) বাজেটে অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ৪০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ভবন মেরামত এবং সংস্কার খাতে ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় এসব অংক যদিও অপ্রতুল, তার পরেও ভালো পদক্ষেপ বলতে হবে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নতুন এমপিওর বাজেট রাখা হয়েছে। এটি করতে হবে, কারণ এতে দেশের সম্পদের একটা ভারসাম্য রক্ষিত হয়, দারিদ্র্য দূরীকরণ হয়। এখানে গ্রামীণ শিক্ষিত বেকারদের চাকরি হয়, গ্রামীণ অর্ধসচ্ছল অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিশাল অপচয় হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয়, যেমন রেলওয়ে, বিমান, বিটিএমসি, বিজিএমসসি, বিআরটিএসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে। তার তুলনায় মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য খরচ করা রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে রাখার কোনো যুক্তি আছে? শুধু দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় অর্থ দিয়ে লালন-পালন করা ছাড়া আর কোনো কাজে লাগছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান অনেক উন্নত আর  দুর্নীতিও কম। আমাদের প্রয়োজনই দুটো। বাজেটে আমরা তা কখনই দেখি না।

সরকারি দপ্তরগুলোর স্বচ্ছতা, জাবাবদিহিতা এবং দক্ষতার বিষয়  বাজেট বক্তৃতায়ই সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন; যা করা হয় না। এবারো হয়নি। কোন সময়ের মধ্যে এবং কীভাবে দেশের নাগরিকরা সরকারি অফিসে সেবা পাবেন। অফিস আছে, বড় বড় ভবন আছে, দপ্তর আছে, নেই সেবা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন তারা সরকারের কাজ করেন, অর্থাৎ উপরের নির্দেশ যেভাবে আসবে সেভাবে কাজ করবেন। আর তাই সেবাপ্রত্যাশীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাজেট যতই বাড়ানো হোক, দেশ জনগণের কল্যাণে কাজে আসছে না। আসবে কীভাবে? অর্থ যারা ব্যয় করবেন তাদের অবশ্য পালনীয় একটি জনকল্যাণমুখী নির্দেশনা থাকতে হয় এবং সেটি আবার জনগণকে জানার সুযোগ করে দিতে হয়। তা না হলে সেবাগ্রহণকারী সেবাদানকারীদের মধ্যে এক বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়। গ্যাপ দিনে দিনে কমার কথা কিন্তু সরকারি অফিস দপ্তরে ঘুরে ঘুরে যা দেখলাম, তাতে সর্বত্রই প্রমাণ পেলাম যে বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়ে আছে। কমানোর কোনো প্রচেষ্টা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ের - ঘণ্টা পরও কাউকে অফিসে পাই না। অধিকাংশ রুম তালাবদ্ধ, অফিসে এলেও তারা নিজেদের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। যাদের সেবা প্রদান করার কথা, তার চেয়ে উপরস্থদের খুশি করা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। অর্থাৎ নিজেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। সেবা প্রদান করবেন কখন? যে কাজটির জন্য প্রয়োজন ঘণ্টা, সেই কাজ মাসাধিককালেও সম্পন্ন হয় না সরকারি অফিসে। মনে হয় যেন ব্রিটিশ আমলকেও হার মানিয়েছে। জনগণ এগুলো কাকে জানাবে? শুধু গুমরে মরছে তাদের চাপা কান্না। উেকাচের জন্য ফাইল চালাচালি, এলোমেলো কথাএগুলো কি দেশের সরকারি অফিসগুলো থেকে কোনো দিনই দূর হবে না? কে দেখবে এগুলো? আমরা দেখে, প্রত্যক্ষ করে দু-চার লাইন পত্রিকায় লিখতে পারি, তাতে তাদের যে কিছু আসে যায় না বা তাদের কিছু হবে না, তা তারাও জানে। আর এজন্যই সর্বত্র চলছে গা-ছাড়া ভাব।

মাল্টি স্টেকহোল্ডারদের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে পরিচালিত গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং সংঘাতপীড়িত দেশগুলোয় শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে কাজ করে। তারা বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন, বাস্তবায়ন মূল্যায়ন বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মোট ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির থেকে শতাংশ গণশিক্ষায় বরাদ্দ হচ্ছে কিনা, শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ক্ষেত্রে তথ্য পরিসংখ্যানের প্রাপ্যতা উন্নয়ন, বরাদ্দ নির্ধারণে চাহিদার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান দক্ষতা উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল, যদিও মূল শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সরকারের ২৮টি মন্ত্রণালয় বিভাগ মিলে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাস্তবায়ন করার কথা, যেখানে শিক্ষাবহির্ভূত খাতও ছিল। দাবি ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ শিক্ষা খাতের বরাদ্দ হিসেবেই থাকা শ্রেয়, যেটি কোনো বছরই করা হয় না। এবারো হয়নি।

 

মাছুম বিল্লাহ: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ গবেষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন