রংপুরে দুর্ভোগে ৫ হাজারের বেশি পরিবহন শ্রমিক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রংপুর

গৌতম চক্রবর্তী পেশায় একজন বাসচালক। দুই মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। বড় ধরনের অসুস্থ না হলে প্রতিদিন আবু হেনা পরিবহনের বাস নিয়ে রংপুর থেকে দিনাজপুর যাত্রী পরিবহন করেন। এতে ৬০০-৮০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে ভালোই চলছিল তার। কিন্তু বর্তমানে দেশব্যাপী চলা লকডাউনে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছে পরিবারটি। এখন পর্যন্ত হাজার টাকারও বেশি ঋণ হয়ে গেছে গৌতমের। এভাবে আরো কতদিন কর্মহীন থাকতে হবে তা তিনি জানেন না।

আলী ইমরান পরিবহনের সুপারভাইজার আব্দুল ওহাব। লকডাউনের কারনে পাঁচ ছেলেমেয়েসহ সাতজনের পরিবার নিয়ে অথই জলে পড়েছেন। আর কতদিন ঋণ করে পরিবারের ব্যয় বহন করতে পারবেন তা তিনি জানেন না।

বাসের হেলপার মো. মানিক মিয়ার অবস্থা আরো খারাপ। খেয়ে না খেয়ে তার দিন কাটছে।

এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে রংপুর জেলার পাঁচ হাজারের বেশি বাস শ্রমিক এমন দুর্ভোগে পড়েছেন। পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি অথবা পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো রকম সহায়তা।

লকডাউনে সব পেশার মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবচেয়ে বেশি আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন যাত্রী পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকরা। শ্রমিক মালিক সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৪৫০ বাস চলাচল করে।

আলবিন পরিবহনের চালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাধারণত বাসে শ্রমিক থাকে তিন-চারজন। রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক রোনাচুর জামান মিন্টু বলেন, লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বাসে কর্মরত শ্রমিকরা। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা তারা পাননি। তবে দ্রুত যাতে সব ক্ষতিগ্রস্ত মোটর শ্রমিকরা সর্বাত্মক সহায়তা পান সেজন্য সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কাজ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

যদিও নিত্যপণ্য খাদ্য পরিবহনের অনুমতি থাকায় সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিকদের উপার্জন এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। রংপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ট্রাক আছে হাজার ৭০০টি। নিবন্ধিত শ্রমিক আছেন হাজার ৮০০ জন।

সংগঠনের সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান (হাফিজ) বলেন, পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাচ্ছেন হাতে গোনা কিছু শ্রমিক। লকডাউনের কারণে সাধারণ ভাড়া নেই বললেই চলে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ট্রাক শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে তিনি দাবি করেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা তারা পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরও শ্রমিকরা কোনো রকম সরকারি সহায়তা পাননি। ফান্ডে কোনো টাকা না থাকায় সংগঠন থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কোনো সহায়তা করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় জেলার প্রায় হাজার ২০০টি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বর্তমানে দিন কাটছে অর্থকষ্টে।

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, গত বছর প্রথম লকডাউনের সময় শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল। এবারো সহায়তা দেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন