ঢাকা চেম্বারের ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস

নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন পবিত্র রমাজন মাস উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এমন আশ্বাস দেন ব্যবসায়ী নেতারা।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোজা এলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময় পণ্যের সরবরাহ চাহিদার সমন্বয় থাকে না।

পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তত্পর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সময় তিনি ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। এর মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেয়া যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে নয় সদস্যবিশিষ্ট বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে। ফলে বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ের রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর ফলে জনগণের আয় কমেছে। পাশাপাশি কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ এবং সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করছেন। পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বে। খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।

ডিএসসিসির কাঁচা সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে। সময় রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানো এবং ব্যবসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসেন।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা বলেন, পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোনো ঘাটতি নেই। শুধু ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনাতুল্লাহ জানান, গরম মসলার মজুদের কোনো স্বল্পতা নেই। তাই ধরনের পণ্যের কোনো দাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে কোনো পণ্যের মজুদের স্বল্পতা নেই। রমজানে তাদের সব টিম সপ্তাহে সাতদিন কাজ করবে। এছাড়া মাংসের দাম নির্ধারণের একটি নির্দেশনা দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিএসটিআইয়ের পরিচালক (প্রশাসন) তাহের জামিল বলেন, বর্তমানে ২২৭টি পণ্যে বিএসটিআই মান নিয়ন্ত্রণ সনদ প্রদান করেছে। মানসম্মত পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে বিএসটিআইয়ের পক্ষ হতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে আলোচনাকালে দ্রব্যমূল্যবিষয়ক সব তথ্য পুলিশকে দেয়ার আহ্বান জানান ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে ডিএমপির পক্ষ হতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সব জনগণকে নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

ঢাকা শহরের ভেতরে সুপারশপের ২০০টি কেন্দ্র রয়েছে বলে ওয়েবিনারে জানান বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ। তিনি জানান, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। এছাড়া এসব সুপারশপে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন