ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে

চাটমোহরে বোরো আবাদ ব্যাহত

শফিউল আলম দুলাল, পাবনা

পাবনার চাটমোহরে চৈত্রের তাপদাহে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। শ্যালো মেশিনে পানি না ওঠায় বোরো ধানের আবাদ নিয়ে উপজেলার কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষকরা দাবি করছেন।

এদিকে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে উপজেলায় বিদ্যমান নদী জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় ফসল আবাদে দুর্ভোগ বেড়েছে দ্বিগুণ। কৃষকরা শুকিয়ে যাওয়া নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু যেসব এলাকায় নদী কিংবা বড় জলাধার নেই, সেখানে পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। এছাড়া ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় খাওয়ার পানি সংকটও দেখা দিচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি হস্তচালিত নলকূপ এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৫৮ টন চাল। গত মাসেই আবাদের প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করেছেন কৃষকরা। চলতি মাসে ধানে শীষ আসতে শুরু করেছে। কিন্তু চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে উপজেলায় বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার কৃষকরা জানায়, ১০০-১২০ ফুট গভীরে পাইপ বসিয়েও মিলছে না পানি। পানির স্তর নাগালে পেতে অনেকে পাঁচ-সাত ফুট পর্যন্ত গর্ত খনন করে সেখানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় পাবনা চাটমোহরে প্রচুর পরিমাণ নদী থাকলেও বেশির ভাগই কালের বিবর্তনে শুকিয়ে মরে গেছে। বর্তমানে যেসব নদীর অস্তিত্ব আছে, সেগুলোও শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলার কৃষকরা শুকিয়ে যাওয়া গুমানী, চিকনাই বড়াল নদীর তলদেশে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছেন। পাইপের মাধ্যমে পানি কৃষিজমিতে নিয়ে গিয়ে সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে বাড়ছে ব্যয় ভোগান্তি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নিমাইচড়া, হান্ডিয়াল হরিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অনেক বোরো চাষী গভীর নলকূপ স্থাপনের পরও জমিতে সেচ দেয়ার জন্য আশানুরূপ পানি পাচ্ছেন না। তারা গর্তের মধ্যে মেশিন বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার নদীতে পাইপ স্থাপন করে পানি তুলছেন। শুধু ফসলের মাঠে নয়, নলকূপের মাধ্যমে খাবার পানি পেতেও সমস্যা হচ্ছে। অকেজো হয়ে পড়েছে অনেক হস্তচালিত নলকূপ।

ভুক্তভোগী বোরো চাষী রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন চাষী জানান, ১০০-১২০ ফুট গভীরে পাইপ বসিয়েও সেচকাজের জন্য ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্যালো মেশিনে পানি কম ওঠায় বোরো চাষাবাদে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। সেচ কাজে সময়ও বেশি লাগছে। বসতবাড়িতে পানি সংকট দেখা দেয়ায় আলাদা আলাদা স্থানে নলকূপ স্থাপন করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

উপজেলা বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব মো. ফারুক আহমেদ বলেন, সাধারণত ১০০-১২০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইপ বসালে সেচের পানি পাওয়া যায়। তবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বর্তমানে গভীরতায় সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই পানির লেয়ার স্বাভাবিক হবে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, হস্তচালিত অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। সাব মারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি তোলা হচ্ছে।

ব্যাপারে কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল কাদের বলেন, চলনবিলের নদী, ডোবা, নালা খালে পানি থাকলে বোরো চাষীদের সেচকাজে অসুবিধা হতো না। বৃষ্টি হলে ভূগর্ভের পানির স্তর কিছুটা উপরে উঠবে। নয়তো বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে পানির স্তর বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এতে বোরো ধানের ফলনে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া অনাবৃষ্টির কারণে আম লিচুর মুকুলও ঝরে পড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন