২০২১-২২ অর্থবছর

বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে

মেসবাহুল হক

মহামারীর কারণে কার্যক্রম ছিল সীমিত। এরই প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) অন্যান্য খাতে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগগুলোও মনে করছে, এসব খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যয় করতে পারেনি তারা। আগামী অর্থবছরেই (২০২১-২২) ঘাটতি পূরণ করে নিতে চায় এসব মন্ত্রণালয় বিভাগ। এজন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে অর্থ বিভাগে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় বিভাগগুলোর দাবি পূরণ হলে বাজেটের আকার হতে পারে অর্থ বিভাগের প্রাক্কলনের চেয়েও বেশি। সেক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ব্যাপ্তি ছাড়াবে লাখ কোটি টাকা।

গোটা বিশ্বেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ক্ষত তৈরি করেছে কভিড-১৯। সামনের দিনগুলোয় এর গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, সে বিষয়টি এখনো সবার ধারণার অতীত। কারণে আগামী বাজেটের আকার খুব একটা বেশি বাড়ানোর কথা ভাবছে না সরকারও। অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার হতে পারে লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট প্রণয়নের কাজও সেভাবেই এগোচ্ছে। কিন্তু সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিভাগ চাইছে, আগামী অর্থবছরে অর্থ বিভাগের প্রাক্কলনের চেয়ে তাদের বরাদ্দ বাড়ানো হোক।

প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণের ভিত্তিতে এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় চিঠিও পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর পর থেকেই বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অর্থ সচিব মো. আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি পাঠাচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ।

অর্থ বিভাগের বাজেট প্রণয়নসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন আশা করা যাচ্ছে না।  অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত ধারাবাহিক প্রাক-বাজেট বৈঠকে করোনার প্রভাবের কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন বিদ্যমান করহার হ্রাসসহ সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের প্রণোদনার প্রস্তাব করছে। তাই মন্ত্রণালয়গুলোর বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা কঠিন হবে। তবে যে পরিমাণ অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব আসছে, তাতে আগামী বাজেট লাখ ৯৩ হাজার টাকায় বেঁধে রাখা সম্ভব হবে না। বরং এর আকার লাখ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিষয়ে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয় কম হলেও করোনার কারণে ব্যয়ও কমেছে। এর ফলে চলতি অর্থবছর লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার পর সংশোধিত বাজেটে এর আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে লাখ ৩৮ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংশোধন করে বরাদ্দ সাত হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তবে এবার যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ করোনার কারণে কাজ করতে পারেনি, তারাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাইছে। তাই বাজেটের আকার প্রাথমিক প্রাক্কলন থেকে বাড়ানো হতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩৬টি মন্ত্রণালয় বিভাগের সঙ্গে সভা করেছি। তাদের অধিকাংশই বাড়তি বরাদ্দ চেয়েছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বাড়তি বরাদ্দ চাইছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আগামী বাজেটে বিভাগটির প্রাথমিক ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ। এজন্য অতিরিক্ত ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণে যেসব সংস্থা আছে তাদের চাহিদার আলোকে বাজেট নির্ধারণ করা হয়। প্রতি বছর উন্নয়ন প্রকল্প বাড়ছে, বাজেটের আকারও বাড়ছে। এখন আমরা মাটির নিচের পানি না তুলে নদীর পানি পরিশোধন করে জনগণকে দিচ্ছি। ধরনের একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করতে - হাজার কোটি টাকা লাগে। বিভিন্ন নগরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া ব্রিজ-কালভার্ট হয়। এখন আর সস্তায় রাস্তার উন্নয়ন করা হয় না। মানসম্পন্ন রাস্তা করা হয়। এসব কারণেই বাজেটে বেশি পরিমাণে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ চায় হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত -সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সরকারি অংশে অতিরিক্ত হাজার ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রকল্প সাহায্য অংশ থেকে হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী সরকারি অর্থ দেয়া না হলে প্রকল্প সাহায্যের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। মৎস্য প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ নিয়ে অর্থ সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মাদ ইয়ামিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিভাগটির জন্য বরাদ্দ বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে ৪৯৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা বিভাগ বাড়তি বরাদ্দ চেয়েছে ৫৯ কোটি টাকা।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানালেন, আগামী অর্থবছরে কভিড পরিস্থিতি কেমন হবে, তা এখনো অনুমান করতে পারছেন না তারা। তবে তারা রাজস্ব আয়ের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়তে পারে।

সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা . বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সব বাজেটেই আকার বাড়ানো হয়, তবে বাস্তবায়ন কতটুকু হয়? আমাদের দেখতে হবে, গত বাজেটের বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে। আবার চলতি বাজেটের সংশোধিত বাজেটে কতটুকু বাস্তবায়ন হতে পারে, তার আলোকেই বাজেট প্রস্তুত করা উচিত। প্রত্যেকবারই উচ্চাভিলাষী বাজেট দেয়া হয়। বাস্তবায়ন নিচের দিকে থাকে। এতে বাজেট প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থাই নষ্ট হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন