সুইজারল্যান্ডে ‘প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা বোরকার’ বিপক্ষে গণভোট

বণিক বার্তা অনলাইন

মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাবসহ জনসমুক্ষে ‘মুখ ঢাকা পোশাক’ নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ভোটাররা। সরকারি ফলাফল বলছে, রবিবার এই প্রস্তাবের পক্ষে গণভোটে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছে। খবর বিবিসি

সংসদে ‘চরমপন্থা বন্ধ করুন’ স্লোগানে এমন প্রস্তাবটি তুলে ধরে দেশটির ক্ষমতাসীন ডানপন্থি সুইস পিপলস পার্টি (এসভিপি)। আর এটিকে মুসলমানদের জন্য ‘একটি কালোদিন’ বলে আখ্যা দিয়েছে শীর্ষস্থানীয় একটি ইসলামিক গ্রুপ। এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে বলেও জানিয়েছে মুসলিম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। যদিও সুইস সরকার এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলেছিল, নারীরা কী পরবেন তা নির্দেশ করা রাষ্ট্রের কাজ নয়।

লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডে বোরকা পরা নারী প্রায় নেই বললেই চলে। দেশটিতে সবমিলিয়ে বোরকা পরেন ৩০ জনের মতো নারী। ৮৬ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাংশ, যাদের বেশিরভাগই তুর্কি, বসনিয়া ও কসোভো বংশোদ্ভূত।

মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনেকেই ভোটের প্রচারণায় ব্যবহৃত ছবি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সানিজা আমেতি নামে এক মুসলিম নারী বিবিসিকে বলেছেন, সুইজারল্যান্ডের অনেক মুসলমান এই ছবিতে অপমান বোধ করবেন এবং ভাববেন তারা এই সমাজের অংশ নন। তাদের এমন এক কোণে ঠেলে দেয়া হচ্ছে যারা সেখানকারা না। আমরা নিশ্চয়ই ছবিতে ব্যবহৃত এই নারীর মতো দেখতে না, একদমই না।’

অবশ্য মুসলিম নারীরা বুরকা ও নিকাব ছাড়াও হিজাবসহ আরো বেশ কয়েকরকম পোশাক পরেন, যেগুলোতে মুখ ঢাকা থাকে না। সেই পোশাকগুলো নিষিদ্ধ হচ্ছে না।

সুইজারল্যান্ডে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য গণভোটের মুখে পড়া এটাই প্রথম নয়। ২০০৯ সালেও নাগরিকরা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মিনার তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ওই সময়ও এর প্রস্তাবক ছিল এসভিপি। প্রস্তাবনায় দলটির নেতারা বলেছিলেন, মিনার ইসলামীকরণের একটি চিহ্ন। 

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের এই ভোটের ফলাফল দেখেই বলা যাবে না যে তারা ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে উঠছেন। এমনকি সুইজারল্যান্ডের অনেক নারীবাদী- যারা এই বোরকা এবং নিকাবকে নারীদের প্রতি ‘জুলুমের’ প্রতীক মনে করেন; তারাও এই আইনের বিরোধিতা করেছেন। তারা বলছেন, আইন কখনোই বলতে পারে না, নারী কী পরবেন কী পরবেন না।

এই প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, ‘এটি একটি বিপজ্জনক নীতি যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মসহ নারীর অধিকার লঙ্ঘন করে।’

অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতেও প্রকাশ্যে ইসলামী পোশাক পরা বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার জের ধরে ২০১১ সালে ফ্রান্স জনসমক্ষে পুরো মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া এবং বুলগেরিয়ার মত দেশগুলোতেও হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন