ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য

তিন বছরে বিএসসি ডিগ্রি দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফ সুজন

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা (এনইউবিটিকে) ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) যদিও চার বছরের প্রোগ্রামগুলোকে তিন বছরের দেখিয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি অফার করছে এনইউবিটিকে। একই বিষয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রি অফার করছে খুলনার আরেকটি বেসরকারি উচ্চ শিক্ষালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও।

এনইউবিটিকে নর্থ ওয়েস্টার্নের মতো চার বছরের ডিগ্রিকে তিন বছরে রূপ দিয়েছে দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির অনুমোদন না থাকলেও মূলত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টাতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, নির্দেশিকা, ব্যানার বিজ্ঞাপনসহ নানা মাধ্যমে তিন বছরের বিএসসি ডিগ্রির প্রচার করা হচ্ছে।

ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের কিছু নির্ধারিত ক্রেডিট কমানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি কোনোভাবেই এক বছরের জন্য নয়। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রসঙ্গে বলেন, ইউজিসি থেকে প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয়ার সময় স্পষ্টভাবে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় নিয়মিত প্রোগ্রামের বাইরে বিশেষ প্রোগ্রাম, শুক্র-শনিবারের স্নাতক প্রোগ্রাম ধরনের কোনো পরিবর্তন এনে প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যাবে না। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে সেটি অবশ্যই নিয়মবহির্ভূত।

একমাত্র ঢাকা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ছাড়া দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই ডিপ্লোমা সনদের ভিত্তিতে স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি নেয় না। ডুয়েটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের যে সংখ্যক ক্রেডিট ছাড় দেয়া হয়, সেটি কোনোভাবেই এক সেমিস্টারের বেশি নয়। প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যখন ক্রেডিট ছাড়ের দাবি জানানো হয়। তখন ডুয়েটের শিক্ষকরা ডিপ্লোমার সিলেবাস পর্যালোচনা করে কিছু ক্রেডিট ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাতে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ এক সেমিস্টারের ছাড় পায়।

কয়েক বছর আগে নিয়মিত প্রোগ্রামকে শুক্র-শনিবারকেন্দ্রিক সন্ধ্যাকালীন কিংবা বিশেষ স্নাতক প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা করে কয়েক দফায় তাদের সতর্ক করেছিল ইউজিসি। এরপর কিছুদিন অননুমোদিত এসব প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি বন্ধ রেখেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভর্তি অফিসে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, পুনরায় এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে।

ইউজিসির ভাষ্যমতে, সপ্তাহে এক-দুদিন তথাকথিত ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইইই টেক্সটাইলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সনদ দিচ্ছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশেরই মানসম্মত কোনো ল্যাব নেই। প্রোগ্রাম অনুমোদনের সময় যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো নানা নামে সময়ে প্রোগ্রাম খুলে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরতদের, বিশেষ করে ডিপ্লোমাধারীদের ছুটির দিনকেন্দ্রিক প্রোগ্রাম অফার করে ভর্তি করানো হচ্ছে। তারা নিয়মিত বিরতিতে এসে ফি বাবদ অর্থ জমা দিয়ে যায়। হাতেগোনা কিছু ক্লাস-পরীক্ষা করে খুব সহজেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নিচ্ছে তারা।

ইউজিসির ওয়েবসাইটেও দেখা যায়, সেখানে তিন বছরের কোনো স্নাতক প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সন্ধ্যাকালীন ছুটির দিনভিত্তিক প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয়ারও উল্লেখ নেই।

বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা নিয়মিত স্নাতক প্রোগ্রামের অনুমোদন দিয়ে থাকি। সেখানে প্রোগ্রামের মেয়াদের কথা উল্লেখ থাকে। সেটিকে নিজেদের ইচ্ছামতো পরিবর্তনের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই। চার বছরের ডিগ্রি তিন বছরে দেয়ার মানেই সেখানে যথাযথ মান রক্ষা করা হচ্ছে না। অননুমোদিত উপায়ে ধরনের প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি ইউজিসির নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ প্রোগ্রাম দেয়ার সময় স্পষ্টভাবে লিখে দেয়া হয়, এসব প্রোগ্রাম নিয়মিত। ছুটির দিন বা ইভিনিং লিখে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর পরও যদি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ না করে কোনো প্রোগ্রাম অফার করে, সেটি অননুমোদিত হিসেবে গণ্য হবে।

উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ডিপ্লোমা ডিগ্রিদের কিছু ক্রেডিট ছাড় দেয়, তবে সেটি কোনোভাবেই এক বছর নয়। প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক . সঞ্জয় কুমার অধিকারী বণিক বার্তাকে বলেন, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা সবখানেই একটু ছাড় পায়। তবে সেটি এক বছরের বলে মনে হচ্ছে না। আসলে আমাদের গুণগত মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ তাড়াহুড়ো করে ডিগ্রি দেয়া বা নেয়া এটা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন