করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত শিক্ষাবর্ষজুড়েই শিক্ষার্থী সংকটে ছিল দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে বছরের শেষদিকে ‘ফল সেমিস্টারে’ ভর্তিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আসন ফাঁকা ছিল কোনো কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তবে করোনা শনাক্তের হার কমে আসা ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশকে সামনে রেখে ‘বসন্ত সেমিস্টারে (স্প্রিং)’ শিক্ষার্থী সংকট কাটিয়ে ওঠার আশা দেখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি। এর মধ্যে প্রায় ১০টি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নেই। বাকি ৯৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আসন রয়েছে আড়াই লাখের বেশি। যদিও কোনো শিক্ষাবর্ষেই আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পায় না বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বেসরকারি এসব উচ্চশিক্ষালয়ের শিক্ষার্থী সংকট আরো প্রকট হয়েছে। শিক্ষার্থী না পেয়ে সর্বশেষ ‘ফল সেমিস্টারে’ কিছু প্রোগ্রামের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও কম নয়।
তবে হ্রাসমান করোনা শনাক্তের হার ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলকে সামনে রেখে স্প্রিং সেমিস্টারে শিক্ষার্থী সংকট কাটিয়ে উঠতে চায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থী পেতে এরই মধ্যে টিউশন ও ভর্তি ফির ওপর বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই। শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তির ঘোষণাও দিয়েছে কিছু বিদ্যাপীঠ। এছাড়া ভর্তি সপ্তাহ ও ভর্তি মেলাসহ নানা কর্মসূচিও নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) সভাপতি ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীনির্ভর। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া সংকট প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তো একেবারেই শিক্ষার্থী পাচ্ছিল না। এক কথায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ মাসেই এইচএসসির রেজাল্টের কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়া এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করায় এবার এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী সংখ্যাও আগের যে কোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, বসন্তে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কভিডে সৃষ্ট অর্থ সংকটের কারণে অনেক পরিবারের জন্যই সন্তানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো কঠিন হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও মানবিক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
স্প্রিং সেমিস্টারে এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। স্প্রিংয়ে টিউশন ফির ওপর ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উত্তরা ইউনিভার্সিটি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ভর্তি ফির ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অ্যাডমিশন উইক কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
একইভাবে টিউশন ফি ও ভর্তি ফিতে ছাড় দিচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টি টিউশন ফির ওপর ৫০ শতাংশ ও টিউশন ফির ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ভর্তি বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম রিন্টু বলেন, করোনার কারণে গত শিক্ষাবর্ষে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, আমরা আশা করছি এ বছর সেটি কাটিয়ে উঠতে পারব। করোনার প্রাদুর্ভাব কমায় আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। এজন্য এখন আমরা গত সেমিস্টারের চেয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া এইচএসসির ফল প্রকাশের পর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে।
আসনের অতিরিক্ত ভর্তি করালে ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি: এদিকে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থী সংকটে থাকা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ইউজিসির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও প্রোগ্রামভিত্তিক আসনসংখ্যাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আরো কিছু নির্দেশনা রয়েছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব আইন, নীতিমালা ও বিধিবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক ও উন্নত পরিবেশের মাধ্যমে গুণগত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করুক। ভর্তিসহ যেকোনো বিষয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি।
ইউজিসির সম্প্রতি প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসন ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ১৪৬টি এবং শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৭৬ জন। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৮৮৯ জন ছাত্র ও ৩৫ হাজার ৩৮৭ জন ছাত্রী।