যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্তি

আপাতত পরিকল্পনা থেকে বাদ আলিবাবা-টেনসেন্ট-বাইদু

বণিক বার্তা ডেস্ক

আপাতত চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবা, টেনসেন্ট বাইদুকে কালো তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল চারজন ব্যক্তি তথ্য জানিয়েছেন। তবে তিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পনা থেকে বাদ দিলেও শিগগিরই অন্য নয়টি চীনা কোম্পানিকে তালিকায় যুক্ত করবে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বাজার প্রতিযোগিতাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রশাসনের অধীনেও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যান্টি-ট্রাস্ট তদন্ত চলমান থাকবে। খবর রয়টার্স ব্লুমবার্গ।

কালো তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়ার খবর আলিবাবা, টেনসেন্ট বাইদুকে নিঃসন্দেহে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। কারণ ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে নিজের চীনবিদ্বেষী নীতির যতটা সম্ভব বাস্তবায়ন করা যায়, সেই চেষ্টাই দেখা গেছে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। এরই অংশ হিসেবে গত কিছুদিনে একের পর এক চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্তির প্রাথমিক তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে আলিবাবা, টেনসেন্ট বাইদুও ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র কোনো কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার অর্থ হলো সেই কোম্পানিতে কোনো মার্কিন বিনিয়োগকারী লগ্নি করতে পারবেন না। সে হিসেবে তিন টেক জায়ান্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসত। কিন্তু মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

চীনের সেনাবাহিনীর মালিকানা অথবা নিয়ন্ত্রণ থাকার অভিযোগ এনে একের পর এক চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে চলেছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কালো তালিকাভুক্তির বিষয়টি তদারকি করছে। গত সপ্তাহেই খবর প্রকাশ হয়, আলিবাবা, টেনসেন্টের মতো চীনা টেক জায়ান্টরাও তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে। আলিবাবা টেনসেন্ট এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধনের দুটি কোম্পানি। মিলিতভাবে তাদের বাজার মূলধন প্রায় লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।

আলিবাবা, টেনসেন্ট বা বাইদু যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কালো তালিকাভুক্ত হলে তা খোদ মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্যই বড় একটি আঘাত হয়ে দাঁড়াত। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের মোটা অংকের লগ্নি রয়েছে। ফলে চীনা টেক জায়ান্টগুলোর ওপর খড়্গ নেমে আসার অর্থ হলো মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্যও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসা।

টরন্টোভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ক্যাল্ডওয়েল ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারী থমাস ক্যাল্ডওয়েল বলেন, এটি খুবই বাজে একটি নীতি। এশিয়ার কোম্পানিগুলোয় মার্কিনিদের মোটা অংকের বিনিয়োগ রয়েছে। বিনিয়োগ ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে। অবস্থায় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে ঠেলে দেয়াটা মোটেও উচিত নয়। কারণ বিনিয়োগ বাজার সবসময়ই নিরপেক্ষ থাকা উচিত।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশক্রমে গত নভেম্বর থেকে পর্যন্ত অন্তত ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে পেন্টাগন। এর মধ্যে চীনের শীর্ষ চিপনির্মাতা সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (এসএমআইসি) জ্বালানি কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল করপোরেশন (সিএনওওসি) রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের বাজার প্রতিযোগিতা বিষয়ক প্রধান মাকান ডেলরাহিম বলেছেন, তিনি আশা করেন যে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পরও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে অ্যান্টি-ট্রাস্ট তদন্ত অব্যাহত রাখবে। তার মতে, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে টেক কোম্পানিগুলোকে সবসময় নজরদারির আওতায় রাখা। এতে করে ডিজিটাল বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় থাকবে এবং বাজারের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ট্রাস্ট তদন্ত শুরু করেছে বিচার মন্ত্রণালয়। গত অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ট্রাস্ট মামলা হয়। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপরই অর্পিত হবে। এছাড়া নতুন প্রশাসনকে আরো কয়েকটি মার্কিন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে আনা অনৈতিক চর্চার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের মধ্যে অ্যাপল ইনকরপোরেশন অন্যতম। অ্যাপ স্টোর-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে এরই মধ্যে আইফোন নির্মাতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন