বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশ আমাদের, আপনাদের, আমাদের সবার। এ দেশ উন্নত হলে আপনার বাবা-মা-ভাই-বোন ও ভবিষ্যৎ বংশধররা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সে কথা সব সময় আপনাদের মনে রাখতে হবে।
গতকাল বিজিবির ৯৫তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
বিজিবিকে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির মূলনীতিগুলো আপনাদের মনে রাখতে হবে। দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে, ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে, শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলতে হবে ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই চার মূলনীতি আপনারা অবশ্যই মনে-প্রাণে অনুসরণ করবেন। দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন, সততার সঙ্গে পালন করবেন। কারণ দেশটা আমাদের আপনাদের সবার।
নবীন সদস্যদের প্রতি তিনি বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য শৃঙ্খলা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখে সবাইকে চলতে হবে। বাংলাদেশ একটি আদর্শ নিয়েই কিন্তু স্বাধীন হয়েছে। কাজেই সেই আদর্শ নিয়েই চলতে হবে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ ও নিজ কর্তব্য পালনে নির্ভীক থাকতে হবে। আবার অধস্তন যারা, তাদের প্রতিও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশটাকে আমরা যেন ভবিষ্যতে আরো উন্নত করতে পারি, সেদিকে লক্ষ রেখেই সবাই কাজ করবেন; সেটাই চাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এ বাহিনীর তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণের কিছু অংশ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, আজ তোমাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি, অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানি বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম, স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের উপর আমার আছে। আশা করি, তোমরা স্মরণ রাখবা। মনে রাখতে হবে, স্মাগলারের কোন যাত নাই, ধর্ম নাই, তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এ দেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।’ এই বক্তব্যে জাতির পিতার যে নির্দেশনা রয়েছে, আমি আশা করি, আপনারা তা মেনে চলবেন। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি এ অপকর্মগুলো রোধ করতে আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। কারণ এ কথাগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এ দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনাদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।
পাঁচত্তর-পরবর্তী কোনো সরকারই সীমান্ত সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। সীমান্তের যেসব জায়গা উন্মুুক্ত ছিল সেসব জায়গায় আমরা নতুন নতুন বর্ডার পোস্ট তৈরি করছি। মুক্তিযুদ্ধে তত্কালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআরের ভূমিকা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
দেশের সীমান্ত বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে, ভালো মানের জলযান আমরা নিচ্ছি। অর্থাৎ জলে, স্থলে, আকাশে সব ক্ষেত্রেই এখন বিজিবির বিচরণ আছে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার জনবল নেয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে এটা বাড়ানো হবে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নারী সদস্যও প্রথম আমরাই নিতে শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক সরঞ্জামের জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সীমান্তের বিওপিগুলো (বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট) উন্নত মানের করা হচ্ছে। আধুনিক সার্ভিলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা, অত্যাধুনিক এটিসি ভেহিকল, দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করে আমরা বর্ডার গার্ডকে উন্নত করে গড়ে তুলছি। আধুনিক যুগে আমরা প্রবেশ করেছি, আমাদের সীমান্তরক্ষীরাও সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে। বিজিবি সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পাঁচটি হাসপাতালকে আরো উন্নত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শ্রেষ্ঠ ফায়ারার বিজিবির নারী সদস্য হাসিনা আক্তার বিথিকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েরা যে ভালো ফায়ার পারে, এটিই প্রমাণ হলো। আর নামটাও আমার নামে, তাই আনন্দ হচ্ছে।
করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার প্রকোপ বাড়ছে। আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে। আপনারা নিজেরা সুরক্ষিত থাকবেন, পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখবেন। ভ্যাকসিন কিনতে এরই মধ্যে আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের দেশের মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক, উন্নত জীবন পাক, সুন্দর জীবন পাক—সেটাই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, আমারও সেটা লক্ষ্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার থেকে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি নবীন সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও উপভোগ করেন।